ইনসাইড থট

‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম লেখা শুরু হয় কাজী শাহেদ আহমেদের আজকের কাগজ পত্রিকায়’


প্রকাশ: 31/08/2023


Thumbnail

কাজী শাহেদ আহমেদ গত ২৮ তারিখ আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। কাজী শাহেদ আহমেদকে জানার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তারা তাকে অনেকভাবেই মূল্যায়ন করতে পারেন। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছেন- তা সত্যিই অনন্য। তিনি এ দেশের অর্গানিক চায়ের সাফল্যজনক ব্যবস্থা করেন। পঞ্চগড় জেলায় চা-শিল্পের পথিকৃৎ ছিলেন কাজী শাহেদ। একইসাথে অর্গানিক খাবারের যে গুরুত্ব সেটি আমরা কাজী সাহেদ আহমেদের প্রচেষ্টায় প্রথম ভালোভাবে জানতে পেরেছি।

ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার বড় ভাই এবং আমার মেন্টর ছিলেন। জীবনে চলার পথে প্রতিটি কঠিন সময়ে যাকে আমি বিনাস্বার্থে বড় ভাইয়ের মত পেয়েছি, যিনি অভিভাবকের মত সব সময় আমার পাশে ছিলেন, তিনি হচ্ছেন কাজী শাহেদ আহমেদ। আমি যতদিন জীবিত থাকব কাজী শাহেদ আহমেদের কথা মনে রাখব। তার যে ঋণ, সেটি আমার পক্ষে শোধ করা সম্ভব না, আমি সেই চেষ্টা করতেও চাই না। তার তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই।

কাজী শাহেদ আহমেদ যখন আজকের কাগজ পত্রিকা বের করেন তখন থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। সেই সময় মূলত সৈয়দ বোরহান কবীর ও নঈম নিজামের কারণে আমি কিছু লেখা লিখতাম। কাজী শাহেদ আহমেদ তখন তার ছোট ভাই হাসানকে দিয়ে আমার চেম্বারে বলে পাঠালেন, আমি যেন নিয়মিত লিখি এবং সেগুলো আজকের কাগজে প্রকাশ করতে। তখন আমার চেম্বারে রোগী দেখার ফাঁকে নিয়মিত আজকের কাগজের জন্য লিখতাম। তখন প্রায়ই আমার আজকের কাগজে যাওয়া আসা হত। শাহেদ ভাইয়ের সাথে আড্ডা দেয়া হত। সেখানে অনেক সাংবাদিক থাকত এবং তাদের সাথেও আমার খুব ঘনিষ্ঠতা হয়। 

আমার যতদূর মনে পরে, কোনো পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম লেখা শুরু হয় কাজী শাহেদ আহমেদের আজকের কাগজ পত্রিকাতে। কাছাকাছি সময়ে এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রায়ত স্বামী) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ নামে একটি সিরিজ লেখা শুরু করেন, যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং আমিও আমার লেখায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতাম। এরপর আস্তে আস্তে অনেক পত্রিকা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছে। কিন্তু তার আগে কোন পত্রিকা বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেনি।

সেই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বেশ দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কোন অফিস ছিল না। বিএনপি দ্বারা তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিল। কাজী শাহেদ আহমেদ আজকের কাগজেই তাদের অফিস করতে দেন এবং বিভিন্নভাবে তাদের সুসগঠিত হতে সাহায্য করেন। কাজী শাহেদ আহমেদের কারণেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তখন বিএনপি’র রোশানল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। 

একবার সৈয়দ বোরহান কবির ‘বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা’ শিরোনামে একটি কলাম লিখলেন। তখন কাজী শাহেদ আহমেদ এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা খুঁজছিলেন যিনি তার অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখবেন। তখন আমি তাকে বললাম যে আমি রাখব এবং তখন সুভাষ সিংহ রায় তখন বঙ্গবন্ধুর চাদর জরানো একটি ছবি এনে দেয়। সেটি আমি আমার অফিসকক্ষে টাঙ্গানোর পর বেশ হই চই পরে গেল। কাজী শাহেদ আহমেদ তখন আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা করা হয় তার ঠিক কিছুদিন আগে আমি নেত্রীর সাথে আলাপ করেই ইন্ডিয়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাকরি ছেড়ে চলে আসি। আসার কিছুদিন পরই গ্রেনেড হামলা হবার কারণে আমি কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়। তখন আমার চেম্বার পুলিশ ঘেরাও করে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার যে যখন ঘেরাও দেয়া হয় তখন তখন সাধারণত আমি চেম্বারে থাকি না। সেই সময়ও কাজী শাহেদ আহমেদ আমাকে অনেক পরামর্শ এবং সহযোগিতা করেছিলেন।

বিএনপি’র সময় আমি যখন আজকের পত্রিকায় পিতা আমরা মুক্ত আকাশ দেখি লিখেছিলাম, কাজী শাহেদ আহমেদ সেটি দেখে অনেক আগ্রহ পেলেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে বইটি বের করেন এবং প্রকাশন উৎসবও করেন জাতীয় যাদুঘরে। সেখানে যারা আলোচক ছিলেন তাদের মধ্যে আর কেউ বেঁচে থাকলেন না।

কাজী শাহেদ আহমেদের চলে যাওয়া আমাদের জাতীয় জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার একজন বড় চাই, একজন মেন্টর হারালাম। কিন্তু জাতি হারালো তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক সন্তান।          



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭