ইনসাইড বাংলাদেশ

বিশ্ব চিঠি দিবস আজ : প্রযুক্তির কল্যাণে হারিয়ে গেছে আবেগ-অনুভূতির চিঠি


প্রকাশ: 01/09/2023


Thumbnail

‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে। রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার রানার চলেছে, রানার’- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গানের সেই রানার আজ নেই। ডাক বিভাগে লেগেছে অধুনিকতার ছোঁয়া। তবে এত কিছুর পরও দিন দিন কমেছে চিঠি। গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে অর্ধেক। শুধুমাত্র সরকারি কাজে ও অফিসিয়িাল ছাড়া ডাক বিভাগে আর ব্যক্তিগত চিঠি আসে না। যদিও বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি ডাক বিভাগের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তবে কমেছে চিঠি।

আজ ১ সেপ্টেম্বর। দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস হিসেবে স্বীকৃত। বহু আগে ইংরেজ কথাকার সমারসেট মম যা বলেছিলেন, বর্তমানের বাস্তবতায় সেটাই সত্যি। চিঠি লেখা আসলেই এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। ‘ভাল আছি ভাল থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, এই গানের বোল বাঁধতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনো দিন ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে! শেরশাহের ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হতো, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্রের ঝক্কি ছাড়া কেউ ডাকঘরে যে আর যায় না, সে সবারই জানা। অথচ একসময়ে দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যমই ছিল চিঠি। শুধু দূরে নয়, অন্তরের খুব কাছের কাউকে মুখে না বলতে পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে নেওয়া হতো চিঠিতে। এক একটি চিঠিতে কত যে গল্প, কত যে ইতিহাস থাকত! আর থাকত টইটম্বুর আবেগ।

রাজশাহী ডাক বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উত্তরাঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল হয়েছে চার লাখ ২৭ হাজার ৭৩৬টি। এসব থেকে ডাক বিভাগের আয় হয় ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ১২৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি দুই লাখ ৫৭ হাজার ২৩৬টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি আসে ৬৯৫টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯৪টি। বিদেশ থেকে এসেছে ২২৩টি। পার্সেল এসেছে আট হাজার ৪০৫টি। বিদেশ থেকে এসেছে দুটি। জিইপি হয়েছে চার লাখ ছয় হাজার ২১টি ও ইএমএস হয়েছে ১৬০টি।

আর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে উত্তরাঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫টি। এসব থেকে আয় হয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ১৪৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি এসেছে ৯৯ হাজার ২৪৯টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি এসেছে ৪০টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬৫০টি। বিদেশ থেকে এসেছে ৩৯টি। পার্সেল এসেছে তিন হাজার ৮৯৩টি। বিদেশ থেকে এসেছে ছয়টি। জিইপি হয়েছে তিন লাখ ৬৮১টি ও ইএমএস হয়েছে ২৬২টি।

গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯০১টি। আয় কমেছে ৯ লাখ ৯৮০ টাকা।

এদিকে রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা। রাজশাহীতে প্রতিটি কুরিয়ার সার্ভিসেই এখন বাড়তি চাপ। বিশেষ করে আমের মৌসুমে এসব কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস লি. রাজশাহী অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি চিঠি আদান প্রদান হয়। মানুষকে সুন্দরভাবে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কারণেই মানুষ আমাদের বেছে নেয়।

রাজশাহী সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অফিসের চিঠি বুকিং করছিলেন বেসরকারি একটি অফিসের কর্মচারী মো. নাদিম। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসতে হয়। অফিস থেকেই বলে দেয় এখান থেকে চিঠি পাঠাতে।

ডাক বিভাগের কথা বললে তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে চাকরি করি। এর মধ্যে কোনোদিন অফিস থেকে ডাকে চিঠি পাঠাতে বলেনি। তাদের সেবার মান ভালো না। তাই এখানে দেয়। এছাড়া রাতেও বুকিং করা যায়। ডাকেতো আর বিকেল ৪টার পর বুকিং দেওয়া যায় না।

তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। তিনি বন্ধুকে আম পাঠাতে এসেছেন। বলেন, আগে যোগাযোগ ছিল না। তখন বাবা-মা, স্ত্রী, বন্ধু সবাইকে চিঠি দিতাম। এখনতো আর সেইদিন নেই। এখন সবাই চায় দ্রুত উত্তর পেতে। একটু দেরি হলে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে বলে।

তিনি বলেন, আগের সেই দিনের মতো এখন আর চিঠি নেই। সেই চিঠিতে যে কত আবেগ ছিল সেটি বলে বোঝাতে পারবো না। সেই চিঠির জন্য মানুষ অধীর অপেক্ষাও করতো। সেটা একটা মধুর সময় ছিল।

রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল শেখ সাইফুল আলম বলেন, চিঠির সংখ্যা শুধু রাজশাহীতে বা বাংলাদেশে কমেনি, এটা সারাবিশ্বেই কমেছে। মূলত ডিজিটাল সুবিধার কারণেই চিঠি কমেছে। মানুষ এখন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমেইলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করছে। ফলে ব্যক্তিগত চিঠি নেই বললেই চলে। অফিসিয়িাল চিঠি এখন আসছে। ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিঠি অনেক বাড়ছে।

তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ১০১২-১৩ সালে ডাক বিভাগের অ্যাক্ট হয়। এর ফলে ডাক বিভাগের সঙ্গে কুরিয়ারের কম্পিটিশন বাড়ছে। আমাদের আনেক সেবা সম্পর্কে মানুষ জানেও না। ডোমেস্টিক মেইলে আমাদের একটি যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। এখন চিঠি কতদূর গেলো সেটি গ্রাহক নিজে ট্র্যাকিং করে দেখতে পারবে। আশা করছি ভালো একটি সময় আসছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭