ইনসাইড পলিটিক্স

যুদ্ধের সব ফ্রন্ট কেন খুলে দিলো আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 01/09/2023


Thumbnail

নির্বাচনের আর তিন মাসের কিছু বেশি সময় রয়েছে। এই সময় আওয়ামী লীগ কেন তার শত্রুদের সাথে সব ফ্রন্টে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করলো। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে। একদিকে যেমন বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা সরাসরি আক্রমণাত্মক কথা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতেও আওয়ামী লীগ তার অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। সুশীল সমাজের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ বিভিন্ন আইন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সাথেও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। আর এসব কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনের আগে যুদ্ধের সব ফ্রন্টগুলো আওয়ামী লীগের খুলে দেওয়া কি ঠিক হলো? তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ আওয়ামী লীগ শুরু করেনি। বরং যারা বাংলাদেশকে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে চায়, যারা বর্তমান সরকারকে হঠাতে চায় তারা পরিকল্পিতভাবে চারদিক থেকে সরকারকে আক্রমণ করছে। সব ফ্রন্ট থেকে একসাথে সরকারের সমালোচনা শুরু হয়েছে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এটি এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার নীলনকশারই একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা। 

বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। এই দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। যদিও এই কর্মসূচি এখন পর্যন্ত বেগবান হয়নি, কর্মসূচির সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততাও সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু তারপরও বিএনপির নেতারা আশাবাদী। তারা মনে করছেন আগামী দুই মাসে তারা দৃশ্যমান বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন এবং এই আন্দোলনের ফলে সরকার পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন করতে পারবে না। 

সরকার ঘোষণা করেছে, তারা সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচনে কারা আসলো না আসলে সেটা দেখার বিষয় নয়। ফলে রাজনীতির মাঠে আগামী দুই মাস সরকার এবং বিএনপি এবং তার মিত্রদের লড়াইটা যে জমজমাট তা বলাই বাহুল্য। এই লড়াইয়ের জন্য আওয়ামী লীগও প্রস্তুতি নিয়েছে। আজ ছাত্রলীগের সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রতিহত করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে যেমন বিএনপিকে মোকাবেলা করছে তেমনি আওয়ামী লীগের নেতারা রাজপথে থেকেও বিএনপির আন্দোলনের ডালপালা বিস্তার হতে দিচ্ছে না। 

আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক যখন পাল্টাপাল্টি অবস্থান সেই সময় ড. ইউনূস ইস্যুটি সামনে এসেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে এবং তিনি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ১৬০ জন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ী তারা একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। সিজিয়ন পিআর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই বিবৃতিতে প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ইস্যু করা হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সময় হঠাৎ করে ইউনূস ইস্যুকে সামনে আনা ঠিক হল কিনা। কিন্তু একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই ইস্যুটি সরকার আনেনি। বরং নির্বাচনের সময়টাকে সামনে রেখে ড. ইউনূসই এখন সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বানানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন। যাতে নির্বাচন ইস্যুতে সরকার আরও কোণঠাসা হয় এবং ইউনূস ইস্যু থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু সরকার ইস্যুতে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রী গত ২৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ইউনূস ইস্যুটি এখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। 

নির্বাচনের আগেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার সিকিউরিটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। এই আইনটি এখন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের আগেই আইনটি পাস হবে। এই আইন নিয়েও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি এবং শঙ্কা দৃশ্যমান হয়েছে। এই পরিস্থিতিও সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের মধ্যেও সরকারকে নিয়ে নানারকম নেতিবাচক কথাবার্তা এখন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকারও সুশীল সমাজের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা পাল্টা বক্তব্য রাখছে। সবকিছু মিলিয়ে চারদিক থেকে সরকারকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয়টা হলো আগামী নির্বাচন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা, সংবিধান স্থিতিশীল রাখা। সেই ক্ষেত্রে সরকার কি সফল হবে? সব ফ্রন্টে যুদ্ধে কি সরকার জয়ী হতে পারবে? এটাই এখন রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭