ইনসাইড পলিটিক্স

হেফাজতের নতুন কমিটি: সরকারের সাথে সমঝোতা?


প্রকাশ: 01/09/2023


Thumbnail

অবশেষে দীর্ঘ বিরতির পর হেফাজতকে সক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হেফাজত ইসলামের ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এর মধ্য দিয়ে হেফাজতকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কমিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এ কমিটিতে যারা আওয়ামী বিরোধী হিসেবে পরিচিত তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে বিতর্কিত নেতা মামুনুল হককে রাখা হয়নি। মামুনুল হক হেফাজতের আগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং সেখান থেকে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বক্তব্য রাখছিলেন। এমনকি সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় মামুনুল হক এবং জুনায়েদ বাবুনগরী মিলে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বিরোধিতা করেছিলেন এবং এই সময় তারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছিল। যদিও এরপর নারী কেলেঙ্কারিতে মামুনুল হক গ্রেপ্তার হন এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুবরণ করেন। এখন যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটিকে নমনীয় কমিটি বলা হচ্ছে। সরকারের সাথে একটি সমঝোতার ভিত্তিতেই এই কমিটি করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা রকম আলাপ আলোচনা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, এই কমিটিতে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী বা কোন অনুসারীকেও রাখা হয়নি। হেফাজত কি তাহলে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবে? সরকারের সাথে একটি সমঝোতার ভিত্তিতেই কি হেফাজত নতুন কমিটি গঠন করল? যে কমিটিতে আওয়ামী লীগ বিরোধীদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ জোরেশোরেই আলোচনা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে হেফাজত আলোচনায় আসে। সেই সময় হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা শফী শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং সেই কর্মসূচিতে তারা সরকার পতনের ডাক দিয়েছিল। ঢাকায় ঢুকে কোমলমতি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। তারা বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে এক ধরনের তাণ্ডব চালায়। সন্ধ্যার পর থেকে তারা শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করে। এই সময়ে বিএনপির নেতারা শাপলা চত্বরে হেফাজতের কর্মসূচিকে সমর্থন ঘোষণা করে। 

বেগম খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, হেফাজতের যে সমস্ত কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন তারা আমাদের মেহমান, তাদেরকে যেন আপ্যায়ন করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে হেফাজতের এই অবস্থান কর্মসূচি পন্ড করে দেয়। এরপর হেফাজতের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই আল্লামা শফী পন্থীরা সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করে। তখন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তির মাধ্যমে হেফাজত সরকারের সাথে আপোষ রফা করে। এই আপস রফার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের মে মাসের তাণ্ডবের একটি মামলার বিচার হয়নি। হেফাজত আস্তে আস্তে সরকারের সরকারের অনুসারী এবং সরকারের সমর্থকে পরিণত হয়। কিন্তু আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজত দখল করে নেয় জামাতপন্থী না। তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম উস্কানিমূলক বক্তব্য, স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থান জানান দেন। এসময় হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিতি পান মামুনুল হক। তিনি সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে হেফাজতের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলোকে চাঙ্গা করা হয়। 

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমন উপলক্ষে হেফাজতের তাণ্ডবের কারণে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই বাস্তবতায় হেফাজত আবার গুটিয়ে যায় এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এ সময় জুনায়েদ বাবুনগরীও মৃত্যুবরণ করেন। মহিবুল্লাহ বাবুনগরী নতুন আমীর হওয়ার পর হেফাজতের কর্মকাণ্ড একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু এখন নির্বাচনের আগে হেফাজতকে আবার সক্রিয় করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট মনে করছেন, জামায়াত যেন সংগঠিত না হতে পারে এবং আগামী নির্বাচনে যেন ইসলামী দলগুলোকে আনা যায় সেজন্যই হেফাজতের প্রতি সরকার নমনীয় হয়েছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি এ ধরনের বক্তব্যকে অস্বীকার করেছে। সরকার বলছে, হেফাজতের সাথে কোন রকমের সমঝোতা সরকারের নেই। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭