ইনসাইড পলিটিক্স

দীর্ঘমেয়াদে অনির্বাচিত সরকার, বিএনপিতে দুই মত


প্রকাশ: 06/09/2023


Thumbnail

বিএনপি এখন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করছে।  বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণও করবে না। তবে কূটনৈতিক মহল, সুশীল সমাজ বিএনপির এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানাচ্ছে। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এবং সুশীল সমাজের কিছু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তারা এই চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে বিএনপিকে সমন্বিত করার চেষ্টা করছে। সুশীল সমাজ মনে করছে, বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক এবং অর্থনৈতিক, তাতে তিন মাসের জন্য একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যথেষ্ট নয়। একটি দীর্ঘ মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। আর এই সরকার গঠন করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রয়োজন হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজের দু’জন প্রতিনিধি বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা বিএনপিকে বলেছেন, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে পাঁচ থেকে সাত বছর মেয়াদে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রের কতগুলো মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করবে। তার মধ্যে রয়েছে-

১. সংবিধান সংশোধন করা, ২. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগ,সুপ্রিম কোর্ট, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ মুক্ত এবং স্বতন্ত্র, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করা। সুশাসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য নীতি কৌশল প্রণয়ন করা। নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা। এই সমস্ত কর্মতৎপরতা মাত্র তিন মাসে সম্ভব না। এই জন্য দীর্ঘ মেয়াদ দরকার। কাজেই বিএনপিকে প্রথমে রাজি হতে হবে যে, তারা পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য একটি অনির্বাচিত সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন দেবে। কারণ আওয়ামী লীগ এ ধরনের সরকারকে সমর্থন দেবে না, সেটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কাজেই বিএনপির সমর্থন ছাড়া এই ধরনের সরকার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। 

সুশীলদের অতীত অভিজ্ঞতা হলো, এক/এগারোর সময়, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দীর্ঘ মেয়াদে যায়, তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তার বিরোধীতা করেছিল। এবার যেন আবার সেই পরিস্থিতি না হয়, এই জন্য আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তারা আলোচনা করে মুচলেকা নিতে চাইছে। তবে বিএনপির মধ্যে এই নিয়ে দুই ধরনের মতামত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতা স্বীকার করেছেন, একটি দূতাবাস এবং কয়েকজন সুশীল তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব জানতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে অনেক নেতাই আছেন, যারা দীর্ঘমেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। তারা মনে করে,এই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সেটি বিএনপির জন্য বিপর্যয়কর হবে। কারণ এই ধরনের দীর্ঘকালীন অনির্বাচিত সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কারো জন্যে সুখকর নয়। 

বিএনপির প্রভাবশালী দু’একজন নেতা বলেছেন, এখন আমরা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করছি। নির্বাচন করলে বিএনপি জয়ী হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার আসলে আবার বিএনপি নেতাদের উপর হয়রানি, অত্যাচার শুরু হবে না- এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া তারেক জিয়ার মামলা, বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ইত্যাদি প্রত্যাহার করা হবে- এমন কোনো গ্যারান্টিও অনির্বাচিত সরকার স্বাভাবিক কারণে দেবে না। 

বিএনপির নেতাদের অভিজ্ঞতা হলো, ২০০৭ সালে এক/এগারোর সরকার এসেই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছিল। তারাই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিয়েছিল এবং সেই মামলার কারণে বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন। কাজেই এই ধরনের সরকার দীর্ঘমেয়াদে থাকলে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যেটা বিএনপির জন্য নেতিবাচক। 

তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, এই মুহূর্তে দরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর পর বিএনপি সংগঠন গুছাবে বা অন্য কিছু করবে। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা নির্বাচনে যাবে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার যে বিএনপি নিধনও করবে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে?- এই প্রশ্ন বিএনপির অনেক নেতার মধ্যেই ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭