ইনসাইড বাংলাদেশ

অনির্বাচিত সরকার, না জাতীয় সরকার?


প্রকাশ: 06/09/2023


Thumbnail

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে? আওয়ামী লীগ থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই দাবির একটিও সমর্থন করেনি। বরং তারা নিরাপদ দূরত্বে থেকে বলছে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। আর পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, অবাধ সুষ্ঠু এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে, এমন নির্বাচন হতে হবে। সেক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, আর বিএনপি যদি তাতে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে রাজনৈতিক বিন্যাস কি রকম হবে?- তা নিয়ে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন রকম আলোচনা করছেন।

তবে এই আলোচনার বাইরে কূটনৈতিক পাড়ায় এবং সুশীল সমাজের মধ্যে একটি অনির্বাচিত সরকার এবং একটি জাতীয় সরকারের ফর্মুলা নিয়ে নানারকম আলাপ-আলোচনা চলছে। কোন ফর্মুলাটি গ্রহণযোগ্য, তা নিয়েও তর্ক-বিতর্ক চলছে কূটনৈতিক পাড়ায়। গুলশান -বারিধারার কূটনৈতিক পাড়া এখন প্রতিনিয়ত সুশীল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে সরগরম থাকছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দূতাবাসে চা-চক্র, ককটেল পার্টি ইত্যাদির নামে নানা রকম বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আদতে নির্ভেজাল আড্ডার আদলে এই বৈঠকগুলোতে আগামী নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য রূপরেখা কি হতে পারে, তা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।

এখানে দুই ধরনের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। একটি হলো আগের মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, যেটি ২০০৮’র নির্বাচন পর্যন্ত বহাল ছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবেন এবং তিনি তার মতো করে দশ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন। এই উপদেষ্টাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। কিন্তু বর্তমান সংবিধানে এই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করেছে। কাজেই এই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অর্থাৎ একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে গেলে সংবিধান সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। সেটি যদি না করা হয়, তাহলে এটা হবে অসাংবিধানিক। এরকম একটি অসাংবিধানিক কার্যক্রম যেকোনো সময় আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। আর এখন সংবিধানে ৭ (ক)  সংযুক্ত হওয়ায় এই ধরনের তৎপরতাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সম্মত না হলে বা আওয়ামী লীগকে দাবি আদায়ে বাধ্য না করা হলে, কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা কায়েম করবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। 

এই অবস্থায় জাতীয় সরকারের একটি ফর্মুলা সামনে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের কিছু কিছু ব্যক্তি। তারা বলছেন, প্রধান বিষয়টি হলো যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েই বিরোধী দলের আপত্তি। ইতিমধ্যেই বিরোধী দল যে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাতে তারা বলেছে যে, শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এখন যদি শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যায়, যে সরকারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে, সে রকম একটি সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালিত হতে পারে। তবে এই ধরনের জাতীয় সরকারের কাঠামো, পরিকাঠামো কি হবে? - তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে।

 বিভিন্ন মহল মনে করছে, আওয়ামী লীগ যেহেতু এখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাজেই আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকেই কাউকে জাতীয় সরকারের প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী করা যেতে পারে। এ ব্যবস্থায় জাতীয় পার্টির জি এম কাদের, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও জাতীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও রেজা কিবরিয়া, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো ব্যক্তিদেরকেও জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত করে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের একটা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নেয়া যেতে পারে বলে সুশীলরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে এই জাতীয় সরকারের কলকাঠি থাকবে সুশীলদের হাতে।

 কিন্তু সমস্যা হলো, আওয়ামী লীগ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এবং আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকেও সবচেয়ে শক্তিশালী দল। কাজেই আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে এবং আওয়ামী লীগ যদি রাজি না থাকে, তাহলে এই ধরনের জাতীয় সরকার কোনোভাবেই গঠন করা সম্ভব নয়। আর তাই অনির্বাচিত সরকার বা জাতীয় সরকার যেটাই বলা হোক না কেন, কোনোটাই আওয়ামী লীগের সম্মতি ছাড়া সম্ভব না। আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, সংবিধানের বাইরে তারা কিছু করবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 এই প্রেক্ষিতে অনির্বাচিত সরকার বা জাতীয় সরকারের ফানুস সহজেই চুপসে যাবে। কারণ আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলকে বাদ দিয়ে আর যাই হোক, জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭