ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম


প্রকাশ: 07/09/2023


Thumbnail

সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে ‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে পঞ্চম পর্ব পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।


"১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঠিক ফজরের নামাজের সময় ধানমন্ডির বত্রিশ নং সড়কের বাড়িতে ইতিহাসের কলঙ্কতম অধ্যায় রচিত হয়। ঘাতকের দল বাঙালি জাতির মহানায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকের হাত থেকে শিশু-নারীরাও রেহাই পায় নি। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কিন্তু যারা অস্ত্রের জোরে সামরিক আইন এনে ক্ষমতা দখল করেছে তারা কোন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী? খুনি খন্দকার মোশতাক কোন পথে ক্ষমতায় এসেছে? জে. জিয়াউর রহমান কোন পথে ক্ষমতায় এসেছে? সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ বা ধারা মতে এরা ক্ষমতা নিয়েছে? হত্যাকাণ্ড করা কোন আইনসম্মত? সংবিধান লঙ্ঘন করা গর্হিত অপরাধ। খুনি মোশতাক ও স্বৈরাচারী জিয়া-এরশাদ সে অপরাধ করেছেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী খুনি মোস্তাক কোনোমতেই রাষ্ট্রপতি হতে পারে না। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হবেন, তার পরিবর্তে স্পিকার অথবা তার পরিবর্তে সংসদ বসে যাকে দায়িত্ব দেবেন তিনি হবেন। কাজেই সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যারা নীতিকথা শোনাতে আসে তারা যে কত বড় অপরাধী এবং অগণতান্ত্রিক, দেশের মানুষের অধিকার হরণকারী—তা বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই এবং এসব অপরাধীকে যারা সমর্থন দেয় এবং বাহবা দেয় তারাও সমান অপরাধে অপরাধী।

মাত্র দুমাস কয়েক দিনের মাথায় মোশতাক তার অপরাধের জবাব পায়। বেঈমান মোনাফেকদের পরিণতি যা হবার তাই হয়। পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার সাথে বেঈমানী করে মীরজাফর বাংলার স্বাধীনতা বণিকদের হাতে তুলে দিয়েছিল মসনদের লোভে বেঈমানদের ব্যবহার করা হয় এবং যারা ব্যবহার করে তারাও বিশ্বাস করে নি। মীরজাফরও তার ক্ষমতার সময় তিন মাস পূর্ণ করতে পারে নি। ঠিক তেমনি বেঈমান মোশতাকও তিন মাস ক্ষমতা ভোগ করতে পারে নি। মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়ে জে. জিয়াকে সেনাবাহিনীপ্রধান বানায়। সায়েম সাহেবের সময়ও জিয়া সেনাপ্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন।

মোশতাকের পর প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদে দায়িত্ব পেলেন। তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়ল একটি নির্বাচন করার। কিন্তু একদিন জেনারেল জিয়া সায়েম সাহেবের সব ক্ষমতা অস্ত্র দেখিয়ে কেড়ে নিলেন এবং এ ব্যাপারে তিনি জেনারেল এরশাদ সাহেবকে ব্যবহার করলেন। জেনারেল এরশাদই ছিল তার দৃষ্টিতে তখন সব থেকে বেশি যোগ্য ব্যক্তি এবং একজন প্রভুভক্ত জীবের মতো। জিয়ার প্রতিটি নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তাই জে. জিয়া বলতেন, এরশাদ হচ্ছে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও যোগ্য লোক, যাকে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধানের আসনে বসিয়েছিলেন।

মার্শাল ল' বহাল রেখে অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করা কোন গণতান্ত্রিক বিধান সামরিক শাসন জারি করে সংবিধান স্থগিত রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে ভীতি প্রদর্শন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন জে. জিয়াউর রহমান। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের সব অধিকার হরণ করেছিলেন। কায়েম করেছিলেন এক অত্যাচারের রাজত্ব। ক্ষমতার মসনদ রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন, সে রক্ত কাদের রক্ত? ঐ সেনাবাহিনীর, বিমান বাহিনীর অফিসার ও জোয়ানদের রক্ত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে তিনি ফাঁসির হুকুম দেন নি। একটি প্রাণও সেখানে করে নি। কোনো রক্তপাত সেখানে তিনি ঘটতে দেন নি। কিন্তু উচ্চাভিলাষী জে. জিয়া তার ক্ষমতার গদি নিষ্কণ্টক করবার জন্য একের পর এক অফিসার ও জোয়ানদের ফাঁসি দিয়েছেন। এমন কী যে কর্নেল তাহের তাকে ক্ষমতায় বসতে সহায়তা করেছেন তাকেও তিনি ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন।

সেনাবাহিনীর যারা জিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের জিজ্ঞেস করি, স্বস্তি দেবে, নিরাপত্তা দেবে, সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, স্নেহ-ভালোবাসা-আস্থা দেবে, সাদামাটা খাদ্য পরিবেশন করবে, তাকে গ্রহণ করবেন। নাকি ফাঁসি দেবে, হত্যা করবে, কথায় কথায় গুলি করবে, স্নেহ-ভালোবাসা থাকবে না, অহর্নিশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন অথচ রোজ পোলাও-কোরমা খাওয়াবে—কোনটা গ্রহণ করবেন? জে. জিয়া সেনাবাহিনীর কী অফিসার কী জোয়ান কাউকে মানুষ বলে গণ্য করেন নি। নির্বিচারে তার ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করে তার মসনদ এদেরই রক্ত তৈরি করেছেন। যাদের তিনি ফাঁসি দিয়েছেন সেইসব পরিবারগুলো কি অবস্থায় দিন যাপন করছে, তাদের পরিণতি কি হয়েছে, তাদের সন্তানেরা কে কোথায় আছে, তাদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন কোথায় কোন অবস্থায় আছে তার খবর কি কেউ রাখে?"

 

(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ৯১-৯২)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭