এডিটর’স মাইন্ড

দিল্লিতেই চোখ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের


প্রকাশ: 07/09/2023


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল দিল্লি সফরে যাচ্ছেন। ভারতের রাজধানীতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল দুপুরে তার ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে। সকালে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের পরপরই সরাসরি তিনি বিমানবন্দরে চলে যাবেন এবং সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এই বৈঠকটি কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নয়, বরং এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। 

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠকের ওপরেই নির্ভর করবে বাংলাদেশের আগামী দিনের নির্বাচন এবং রাজনীতির গতি প্রকৃতি। আর তাই এই বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে?- এ নিয়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত মোটামুটি প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছে। যদিও এতোদিন ধরে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নীতিতে অভিন্ন ছিল। দুইটি দেশ অভিন্নভাবে বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের নীতি এবং অবস্থান তৈরি করতো। কিন্তু এবার এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে। যদিও সরাসরিভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তারা কোনো দলকে ক্ষমতায় আনতে চায় না বা ক্ষমতা থেকে ফেলানোরও অভিপ্রায় তাদের নেই। তারা শুধু চায় বাংলাদেশে একটু অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। 

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এ কারণেই সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তত তিনবার বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার বদল করতে চায়। আর এই অভিযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করলেও দৃশ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। আর এরকম বাস্তবতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না?- তা নিয়ে এক ধরনের সন্দেহ, অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

কিন্তু এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তারা বর্তমান সরকারের পক্ষে রয়েছে। ভারত মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। আবার ক্ষমতার ধারাবাহিকতাও দেখতে চায়। ভারত মনে করে, বাংলাদেশে ক্ষমতার হাত বদল হলে দেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটবে, যেটি ভারত কোনোভাবেই হতে দিতে চায় না। এরকম একটি অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একত্রে মিলিত হচ্ছেন। 

অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হবে এই বৈঠকের মধ্যে। সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। এর আগেও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন এবং সেখানে জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান এবং দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন এবং এই চেষ্টার সাফল্যের উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের অনেক কিছু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিন্দুতে মিলিত হতেই হবে। তাছাড়া এই উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের চাপে পড়বে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু ছাড় দেবে এবং ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতটুকু কথা শুনবে, তার উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ। তাই শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এখন তাকিয়ে আছে দিল্লির দিকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭