ইনসাইড থট

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল


প্রকাশ: 08/09/2023


Thumbnail

গেল এক দেড় মাস আগেও দেশের মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল- ইলিশের বোধ হয় এবার আর দেখা মিলবে না। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাঙালির ইলিশ আবার পাতে আসতে শুরু করেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। গণমাধ্যমে খবর আসছে, ৩/৪ দিনেই  ইলিশ ধরার নৌকা বোঝাই করে  তীরে ভিড়ছে জেলেরা। এমনকি কোন কোন নৌকায় ৫০ থেকে ৬০ টন পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়ছে- যার বাজার মুল্য ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা। এতে জেলেরা বেজায় খুশী। ইলিশ বিক্রি করে পরিবারের খরচ মিটিয়েও মহাজনের ধার দেনা তারা শোধ করতে পারছে।

 বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর গবেষকরা অবশ্য বলে আসছিলো, হতাশা হওয়ার কিছু নেই; ইলিশ আসবে। অনুকূল পরিবেশের জন্য  সাগরে অপেক্ষা করছে ইলিশ। অবশেষে তাই হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে ইলিশের দেখা মিলছে।

ইলিশের জীবনচক্র বৈচিত্র্যময়।  এরা থাকে সাগরে,  ডিম দেয়ার জন্য উজান বেয়ে নদীতে আসে। ডিম দিয়ে আবার সাগরে ফিরে। ডিম থেকে জাটকা তৈরী হয়। এরা ৫/৬ মাস নদীতে থাকে; এরপর সাগরে ধাবিত হয়।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার বেশ কিছু কার্যকর ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। এরমধ্যে জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা, বিএফআরআই এর গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে ইলিশ ধরা জালের ফাঁসের আকার (mesh size) সাড়ে ৬ ইঞ্চিতে উন্নীত করণ, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা এবং সর্বোপরি সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন। 

ইলিশ ধরা জালের ফাঁসের আকার বড় করায় অপেক্ষাকৃত বড় সাইজের ইলিশের পোনা জাল থেকে বেড় হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং এরা সহজেই বড় হতে পারছে। অনুরুপভাবে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করায় জেলেরাও এখন অনেক ক্ষেত্রে মা ইলিশ /জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন ৪ মাস ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৯ টি জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি হারে মোট ৫৭ হাজার ৭৩৯ মে. টন ভিজিএফ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া,  ২০২২ সালে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে ৫৫ হাজার ৪৮৮ টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২ মে. টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এধরণের মানবিক খাদ্য সহায়তা পৃথিবীতে নজিরবিহীন।  অপরদিকে, সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় অক্টোবর _নভেম্বর মাসে নদীতে ইলিশের ডিম থেকে উৎপাদিত ঝাটকা ৫/৬ মাস নদীতে বসবাস করার পর সাগরে এসেই ব্যানিং পিরিয়ড এ পড়ছে। ফলে এরা প্রায় ১ বছর বড় হওয়ার সুযোগ পায় এবং ডিম দেয়ার জন্য পরিপক্ষ হচ্ছে। ফলে এখন অপেক্ষাকৃত বড় সাইজের ইলিশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

একটি ইলিশ বছরে সর্বোচ্চ ২৩ লক্ষ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্যমতে গত ২০২২ সালে ৪০ হাজার কোটি জাটকা নদীতে তৈরী হয়েছে এবং এরা ইলিশ পরিবারের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে। আজকের জাটকাই আগামী দিনের ইলিশ। তাছাড়া,  গত ১৩ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৮৫%। পরিসংখ্যানমতে ২০০৮/০৯ সালে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন যা ২০২১/২২ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন।  তাছাড়া,  সারা পৃথিবীতে এখন যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয়, তার ৮০ পার্সেন্টই উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। এটা জাতির জন্য গৌরব ও অহংকারের। এ অর্জনের জন্য বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন। 

লেখক: ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ,  মহাপরিচালক,  বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট;

ই-মেইল:  yahiamahmud@yahoo.com) 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭