ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন: বিএনপিকে নিয়ে না বিএনপিকে ছাড়া


প্রকাশ: 08/09/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি বিএনপি অংশগ্রহণ করবে? বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মেরুকরণের নানা বিষয়-আশয়। বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বলা হয়েছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটি বড় অংশ মনে করছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতার ধারণা বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য সাপে বর হবে। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে খন্ডিত ভাবে অংশগ্রহণ করে বা অংশগ্রহণ না করে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য ভালো হবে। কি কারণে ভালো হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেছেন, এতে আওয়ামী লীগের কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। আওয়ামী লীগ ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এবং এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা এটিও মনে করছেন। সেক্ষেত্রে তাদের মূল মনোযোগ হবে জনগণকে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা। সেটি আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব বলেই তারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাদের হিসেব খুব পরিষ্কার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি তারা নিশ্চিত করতে পারবেন—এটি মোটামুটি নিশ্চিত। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে যে নির্বাচনে জনগণ ভোটে অংশগ্রহণ করবে। অতীতের নির্বাচন গুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল জন্যই সেই সব নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি অধিকাংশ ভোটাররাই ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হন তাহলে সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না বলেই আওয়ামী লীগ মনে করে। এবং আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এই বার্তাটি জোরেশোরে উচ্চারণ করছে। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের সঙ্গে ভারত চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি অংশ একমত বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করে যে, এরকম একটি নির্বাচন হলে সেটি হবে শান্তিপূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত উৎসব মুখর। আবার এর বিপরীত মতামতও রয়েছে। বিএনপির বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না। এবং এ ধরনের নির্বাচন হতেও দেবে না। 

যদি এই ধরনের নির্বাচন থেকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত বিরত থাকে তাহলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে? বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে কিনা সেটি এখন রাজনীতির অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে সেই নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি কি হবে সেটিও দেখার বিষয়। বিএনপির মধ্যেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এবং এটা নিয়েও তাদের নানা রকম মুখী পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ আছে।

বিএনপির একটি অংশ মনে করে যে, নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যা করা। তারা মনে করে ২০১৮’র নির্বাচনে যাওয়াটা বিএনপির একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল এবং ওই নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখন যদি আবার বিএনপি নির্বাচনে যায় সেটি হবে আত্মহত্যার সামিল এবং দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, কর্মীরা হতাশ হবে। 

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন এবং তার অধীনে নির্বাচন করলে আর যাই হোক বিএনপির বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে যদি সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলেও সেই নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হবে। কারণ এতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা থাকবে, প্রশাসন, পুলিশ নির্বাচনে নিয়ন্ত্রিত কারচুপি করতে পারবে। 

অন্যদিকে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, দলের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। বিশেষ করে ২০১৮’র নির্বাচনের পর দলটি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়া উচিত। নির্বাচনে গিয়ে ৫০/৬০/৭০ আসন পাওয়া এবং একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলার মাধ্যমে দলকে আবার গুছিয়ে তোলা সম্ভব। শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে নির্বাচনে ভালো করবে এবং তখন সরকার কারচুপি করতে বাধ্য হবে বলেও বিএনপির কোনো কোনো নেতার ধারণা। ফলে নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্যতা এবং চাপ সৃষ্টি হবে এবং এটা সরকারকে সংকটে ফেলবে। এরকম একটি ভাবনা থেকেই বিএনপির কেউ কেউ নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে—এ ব্যাপারে সরকার বদ্ধ পরিকর। এবং বিএনপির নেতারাও জানে যে, বড় ধরনের কোনো আন্দোলন তৈরি করতে না পারলে এবং আন্তর্জাতিক কোনো বড় চাপ সৃষ্টি না হলে নির্বাচন হবেই। এখন দেখার বিষয় যে বিএনপি নির্বাচনে যায় কি না যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭