ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম


প্রকাশ: 09/09/2023


Thumbnail

সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে ‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে সপ্তম পর্বে পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম (পর্ব -৭)

-শেখ হাসিনা 

জে. জিয়া ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হবার ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য চরম স্বেচ্ছাচারিতার পথ বেছে নেন। ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ সালে সামরিক ফরমান জারি করেন যা দ্বিতীয় ফরমান ত্রয়োদশ সংশোধন আদেশ নং ২ ছিল। 

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর সামরিক ফরমান (ক) দফার সঙ্গে (কক) এবং (ককক) দফাসমূহ যুক্ত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স সংশোধনপূর্বক এই অর্ডিন্যাল জারি করা হয়। এই সংশোধনীতে বলা হয় যে, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কেবলমাত্র সেনাবাহিনী প্রধান রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াসহ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হবার যোগ্যতা রাখবেন। এই ফরমানে ঘোষণা করা হয় যে, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের কমান্ডার-ইন-চিফ থাকবেন এবং সকল কর্মবিভাগের ওপর তাঁর তত্ত্বাবধান, আদেশ দান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন। এইভাবে মেজর জেনারেল জিয়া একদিকে সেনাকেন্দ্রে স্বীয় চাকরি ও অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবার যোগ্যতা অর্জনের ব্যবস্থা করেন অবৈধভাবে। শুধু তাই নয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৮ এপ্রিল। ১৯৭৮ তারিখের ফুল ৫-১/৭৮/২৪১ নম্বর আদেশ বলে সংশোধিত সেনা আইনের ২৯৩-ক বিধি জারি করেন। এই বিধিতে বলা হয়

“৯৩৯ক-২৯১, ২৯২, ২৯৩ বিধিগুলোর বিধানাবলি অর্ধেক বেতনে কিন্তু মার্শালের পদে অধিষ্ঠিত আছেন এমন কোনো অফিসারের ক্ষেত্রে অথবা বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের বা রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত আছেন এমন কোনো অফিসারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।” ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করবার জন্য জে. জিয়া ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন। যারা শুধুমাত্র চতুর্থ সংশোধনীর দোষারোপ করেন তাদের প্রতি অনুরোধ তারা এ বিষয়গুলোও তলিয়ে দেখবেন এবং ভেবে দেখবেন এই কর্মকাণ্ডগুলো গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় পড়ে এবং কি ধরনের গণতন্ত্র জে. জিয়া এনেছিলেন।

এই সমস্ত সামরিক ফরমানগুলোই পরবর্তীকালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংযুক্ত করে বুলেট দ্বারা অর্জিত ক্ষমতা জবরদস্তি করে ব্যালটের মাধ্যমে বৈধতাদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখলের যে ষড়যন্ত্রমূলক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ও অনুশীলন করেন জে. এরশাদ সেই পদাঙ্ক করেই ক্ষমতা দখল করেন।

‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী সরকারদের কি রূপ আমরা দেখতে পাই? ক্ষমতায় গিয়ে তারা চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করেন নি। কেন করেন নি? চতুর্থ সংশোধনীর যদি দোষ ধরবেন তবে তা বাতিল করলেন না কেন? সামরিক আইন হচ্ছে এমন একটি আইন যা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে আনা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই অসাংবিধানিক আইন জারি করে অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখল করা হয় তাকেই আবার সংবিধানে সংযোজন করে বৈধ করে নেওয়া হয়। আর এই বৈধকরণের প্রক্রিয়ায় গিয়ে দেশের যা ক্ষতি জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদ করেছেন তা হলো:

১. জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এবং ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ও নির্বাচনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কারচুপির আশ্রয় গ্রহণ করে।

২. রাজনীতির দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়ে অসৎ টাকার ব্যবহার করে রাজনৈতিক চরিত্র ধ্বংস করেছেন। 

৩. বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও টাকা ঢেলে ভাঙন সৃষ্টি করেছেন। 

8. বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জিয়ার আমলে এটা ব্যাপকভাবে দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে ক্রোক করে, নিঃস্ব করে দিয়ে অসৎভাবে দলে ভিড়িয়েছেন।

৫. রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে বন্দি করেছেন। বন্দি অবস্থার শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন। যেমন নাকের ভিতর পানি ফেলেছেন, সিলিংয়ে ঝুলিয়ে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছেন। গুহ্যদ্বারে ব্যাঞ্চ অথবা গরম ডিম ঢুকিয়েছেন।

জেনারেল জিয়া প্রথমে প্রলোভন, তা না মানলে অত্যাচার করেছেন। দিনের পর দিন হয়রানি করে একসময় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে দলে ভিড়িয়েছেন। এই ধরনের নানা শক্তি প্রয়োগ করে দল গঠন করে নির্বাচনী প্রহসন করেছেন। অসাংবিধানিক পন্থায় দখলিকৃত অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধকরণের জন্য দল গঠন করেই নির্বাচনে নেমেছেন। জে. জিয়ার "হ্যা" বা 'না' ভোটের যে প্রহসন দেশবাসী জানেন সেখান থেকেই কারচুপি শুরু। এরপর ছিল তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯৭৮ লাগে ‘হ্যা’ বা ‘না’ ভোট ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিদেশি পত্রপত্রিকায় লিখেছিল জিয়া কোন কোন এলাকায় ১১০ ভাগ ভোট পেয়েছেন। এতেই বোঝা যায় কারচুপির কি পরিমাণ ছিল।

জিয়াউর রহমান প্রথম এই ন্যক্কারজনক ভোটের খেলা শুরু করেছিলেন  অস্ত্র ও ষড়যন্ত্র দ্বারা ক্ষমতা দখল করে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। যেহেতু মার্শাল ল’র প্রতি জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই এই ভোটে শিক্ষিত মানুষ অংশগ্রহণ করলেও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ অতীতে তারা দেখেছে যে, ন – তে ভোট দিয়ে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে রায় দিলেও তা অদৃশ্য শক্তির হাতের কারসাজিতে সব ‘হ্যাঁ’ হয়ে গেছে। তাই তারা এখনও মনে করে তাদের ভোট দেবার কোনো প্রয়োজন নেই, যা হবার এমনিতেই হবে। 

(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ৯৬-৯৮)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭