ইনসাইড পলিটিক্স

'বিদেশি চাপ' বুমেরাং হচ্ছে বিএনপির জন্য?


প্রকাশ: 09/09/2023


Thumbnail

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে। আজ একদফা দাবিতে বিএনপি আবার পঞ্চম বারের মতো পদযাত্রা করেছে। বিএনপির প্রধান আশা এই রকম ঢিমেতালে আন্দোলন করলেও কোনো সমস্যা নেই। বিদেশীরা সরকারের ওপর অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করবে এবং সেই চাপে শেষ পর্যন্ত সরকার একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু বিদেশিদের এই চাপ এখন বুমেরাং হয়ে গেছে বিএনপির জন্য।

বিএনপি মনে করছে, বিদেশীরা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। তাদেরকে রাজপথে নামিয়ে বিদেশীরা এখন অন্য কৌশল অবলম্বন করছে। বিদেশিদের এই পাল্টা চাপ মোকাবিলা করে কিভাবে একদফা আন্দোলন বিএনপি করবে সেটাই দেখার বিষয়।
 
গত দুই বছর ধরেই বিএনপি অনেকটা আন্দোলনমুখী এবং বিদেশীরা এই দুই বছর সময় সরকারের ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগ করছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র, সুশাসন ইত্যাদি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর একটি আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছিল। গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। এই ভিসা নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদেরকে ভিসা নীতির আওতায় আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আস্তে আস্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুগত পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে। 

ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে কয়েক মাস আগে। এই সফরে তারা বিএনপিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পাড়াও ভাঙচুর ইত্যাদি তারা সমর্থন করবে না। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হয় সেটি দেখতে চায় এবং তারা জনগণের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশে দেখতে চায়—এমন বার্তাও দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাদে যুক্তরাজ্য আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই অভিন্ন মতামত প্রকাশ করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হয় সেটি দেখতে চায়। আগে কোনো সরকারের ওপর চাপ দিতে চায় না। 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার এই সফর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনেরই বার্তা সূচক। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স। আর এবার জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘণ্টার বেশি একান্ত বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে কথা বলেছেন। এই বৈঠকের প্রতিফলন দেখা গেল আজ জি-২০ সম্মেলনে। সেখানে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং তার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ এর 'হাস্যজ্জল সেলফি' প্রমাণ করে দিল যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। যদিও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ছবি কোন কিছুই প্রমাণ করে না। একটি ছবি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না। কিন্তু যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কথা মতোই বাংলাদেশ ইস্যুতে অবস্থান গ্রহণ করবে এটা নিয়ে অনেক কূটনীতিক একমত। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুখে যতই বলুক না কেন বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি, হবে না কিন্তু বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আস্তে আস্তে ভারতের অবস্থানের অভিন্ন হবে বলেই অনেকে মনে করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন কোথায় গিয়ে দাড়াবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন। কারণ বিএনপির আন্দোলনের একটি অন্যতম প্রধান দিক ছিল যে বিদেশিদের চাপ। সহিংস আন্দোলন নয় বরং বিদেশিদের অব্যাহত চাপ, সুশীল সমাজের সমর্থন এবং রাজপথে বিএনপির শক্তি প্রদর্শন এই তিনের সমন্বয় বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে চেয়েছিল। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি চাপ প্রয়োগ বন্ধ করে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো তাহলে বিদেশি চাপ বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭