এডিটর’স মাইন্ড

ড. ইউনূস না বেগম জিয়া, কাকে ছাড় দিবে সরকার?


প্রকাশ: 09/09/2023


Thumbnail

আগামী নির্বাচনের আগে সরকারের সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। এই দুটি বিকল্পের যেকোনো একটি দিয়ে সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারেন এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। একটি হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যু অন্যটি হলো বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যু। এই দুটি সরকারের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
 
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন আছে। এই সমস্ত ফৌজদারি মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তাকে জেলে যেতে হবে। ইউনূস যেকোনো মূল্যে তার জেল জীবন ঠেকানোর জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন। এ নিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইতিমধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহ একাধিক প্রভাবশালী মার্কিন নাগরিক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এই সমস্ত খোলা চিঠির জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। 

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসের মামলার শুনানির নতুন দিন ধার্য হয়েছে। শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের শ্রমিক ঠকানোর মামলা এখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এরকম একটি বাস্তবতায় সরকার কি নির্বাচন পর্যন্ত ইউনূসের মামলাগুলোর ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করবে? ইউনূসকে কি ফৌজদারি মামলার থেকে দায়মুক্তি দিয়ে শুধু শ্রমিকদের টাকা পরিশোধের ওপরে চাপ প্রয়োগ করা হবে? এটিতে ড. ইউনূস অখুশি হবেন না। কারণ ড. ইউনূস ইতিমধ্যে বলেছেন, শ্রমিকদের যদি দেনা পাওনা থাকে সেটি তিনি দিতে প্রস্তুত। আদালতের বাইরে তিনি এই নিয়ে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছিলেন। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত ড. ইউনূসের সাথে আইনি বিষয়ে একটি আপোষ সমঝোতা করে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে বাড়াবাড়ি রকমের হস্তক্ষেপ তা বন্ধ করতে পারে। কারণ ইউনূস ইস্যুটি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

ক্ষমতাশীল ডেমোক্র্যাটিকদের অত্যন্ত পছন্দের ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারা কখনোই চান না তাদের প্রেসিডেন্টশিয়াল মেডেল পাওয়া কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের কারাগারে অন্তরীণ হোক। আর এই বিবেচনা থেকে সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আপোষ সমঝোতা করতে পারে এমন গুঞ্জনও বাজারে রয়েছে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত ড. ইউনূসের ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানই ধরে রেখেছে। এটা কৌশলগত কিনা নাকি সত্যি সত্যি সরকার শেষ পর্যন্ত ইউনূস নিয়ে কোনো সমঝোতা করবে না সেটি দেখার বিষয়।

সরকারের হাতে দ্বিতীয় ট্রাম্পকার্ডটি হলো বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে হাসপাতালে রয়েছেন। বিএনপির চিকিৎসক এবং নেতারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে আবারও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আবেদন আইন মন্ত্রালয়ের কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রালয়ের অবস্থান কি হবে তা সকলেরই জানা। 

আইন মন্ত্রণালয়ের আগে থেকেই বলে রেখেছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান তাহলে তাকে বর্তমান যে জামিন তা বাতিল করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাকে আগে কারাগারে যেতে হবে। এরকম একটি অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কি সরকার সমঝোতায় যাবে? বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার একটি সুযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে রয়েছে। আওয়ামী লীগ কি সেই সুযোগ গ্রহণ করবে? বেগম খালেদা জিয়া যদি বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশনা দেন তাহলে সেই নির্দেশ অনুসারে কি বিএনপি নির্বাচনে যাবে এবং তখন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার পথ খুলে যাবে? এটিও একটি সমঝোতার সম্ভাবনা। এই সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় যে সরকারের সামনে দুটি বিকল্পের কোনটি সরকার গ্রহণ করে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, এখন পর্যন্ত সরকার দুটি বিষয়ের একটিতেও সমঝোতায় আগ্রহী নয়। বরং সরকারের পক্ষ থেকে অবস্থান আগের মতই রয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং যারা নির্বাচনে অংশ করবে তাদেরকে নিয়ে জনগণের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। বিএনপি যদি সেই নির্বাচনে আসে ভালো কথা, না আসলেও কোনো ক্ষতি নেই। আর এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সমঝোতায় যাবে—এমন কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭