ইনসাইড বাংলাদেশ

বাণিজ্যমন্ত্রী, প্লিজ পদত্যাগ করুন


প্রকাশ: 10/09/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের গ্রামে শহরে আগে প্রায়ই সার্কাস-শো হত। বিনোদনের জগতে এক সময় সার্কাস ছিল অন্যতম। দড়ির ওপর ছাতা নিয়ে হেঁটে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাচ্ছে কিশোরী। বানরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক চাকার সাইকেল চালাচ্ছে শিশু। এসব এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না। মঞ্চের সার্কাস দেখতে পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সার্কাস লেগেই থাকে। মঞ্চের সার্কাস আনন্দ দিত। কিন্তু এই সার্কাস শুধুই কষ্ট আর দুর্ভোগ বাড়ায়।

গত একবছর ধরে মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির আঁচ এখন উচ্চ মধ্যবিত্তরাও টের পাচ্ছেন। কখনো কাঁচামরিচ, কখনো পেঁয়াজ, আবার কখনো বা ডিমের দাম নিয়ে চলে সার্কাস। কোনকিছুর উপরই নিয়ন্ত্রণ নেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। একের পর এক ব্যর্থতার রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

ব্যর্থতার আরও একটি রেকর্ড আজ সামনে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে এ মাসে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছর একই সময়ে যে পণ্যের দাম ছিল ১০০ টাকা, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ১১২.৫৪ টাকায়। এছাড়া জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস, অর্থাৎ জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩।

গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শ্রীলংকাও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে, যা বাংলাদেশ পারেনি। ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য়ের তদারকিতে ব্যর্থতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে কিছু কিছু নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। আবার চলতি বছর বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম যে হারে কমেছে, দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। দু-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে বাড়তিই রয়ে গেছে।

সিন্ডিকেট নিয়ে সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে যে কেউই অবাক হবেন। তিনি বলেন, 'চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার- আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।' তার এমন বক্তব্য সিন্ডিকেটদের ভয়ভীতি দূরে থাক বরং তাদের উৎসাহ দেয়া এবং তাদের ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধিই করে। এমন নিষ্ক্রিয় এবং সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণকারী একজন ব্যক্তি যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য়ের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্বে থাকেন তাহলে বাজারের এমন বেহাল দসা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডার একটি জরিপ করে যেখানে প্রশ্ন ছিল, আপনি কি মনে করেন বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে? প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ এতে হ্যাঁ ভোট দেন। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মানুষ আর পারছে না। মানুষ অতিষ্ঠ। একটি মানুষ ব্যর্থ হতেই পারেন। সবাই সফল হবেন এমনটা ভাবা নিছক বোকামি। কিন্তু নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করতেও নারাজ এই মন্ত্রী। বরং তিনি নিজের ব্যর্থতা লুকাতে প্রধানমন্ত্রীকেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। 

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন করে বলেন, অনেক পণ্যের ব্যাপারে সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে মানুষের পকেট থেকে অনেক টাকা নেওয়া হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলেন। সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না-দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা এমনটি বলেন। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না কোনো মন্ত্রী বলেছেন। জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো তো।

ঠিক পরদিনই (৩০ আগস্ট) মন্ত্রী সুর পাল্টালেন, বললেন ‘বাজার সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই।’ টিপু মুন্সী এটাও জানিয়ে দিলেন ‘প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বাণিজ্য ইস্যুতে তার কোন কথা হয়নি।’ তিনি অবলীলায় বলে দিলেন ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, এমন কথা আমি বলিনি।’ উল্টো তিনি বললেন ‘গতকাল (২৯আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘন্টা ছিলাম। আমেরিকান চেম্বার্সের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আমার কোন কথা হয়নি। উনিও জিজ্ঞাসা করেন নি।’

নিজের ব্যর্থতা লুকাতে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার রেকর্ড গড়েও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। আর কতবার ব্যর্থ হলে তার বোধ হবে? সাধারণ মানুষ এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। অনেকে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টানতে পারছেন না। খোলা আটা আগে যেখানে ২৬-২৮ টাকা কেজি ছিল, এখন ৫০ টাকার ওপরে। যেসব প্যাকেট করা বেকারি পণ্য ৫০ টাকা বিক্রি হতো এখন তা ৬৫-৭০ টাকা। গায়ে মাখার যে সাবানের দাম ৪২ টাকা ছিল, তা এখন ৬২ টাকা। ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া জিরার দাম এখন ১২শ টাকা। ৭৫-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিনির দাম বেড়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে। ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হওয়া টুথপেস্টের দাম বেড়ে এখন ১৩০-১৩৫ টাকা।

মানুষ আর পারছে না। দয়া করে এবার পদত্যাগ করুন। আপনি পদত্যাগ করলে হয়ত রাতারাতি কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু দেশের মানুষ অন্তত আশ্বস্ত হবে। ব্যর্থতাকে লুকানোর চেষ্টা না করে ব্যর্থতা স্বীকার করে আপনি যদি পদত্যাগ করেন তাহলেই আপনি সম্মানিত হবেন। কিন্তু আপনি যদি নিজের মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে ধরে রাখেন তাহলে আপনি আওয়ামী লীগ, সরকার এবং জনগণ সবার কাছে বোঝা হয়ে থাকবেন। তাই আপনার কাছে অনুরোধ করছি। বাণিজ্যমন্ত্রী, প্লিজ পদত্যাগ করুন!


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭