ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম


প্রকাশ: 11/09/2023


Thumbnail

সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে ‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে নবম পর্ব পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।

 

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম

পর্ব -৯

আমি পূর্বেই বলেছি জিয়াউর রহমান পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত দি হেরাল্ড পত্রিকার এই উদ্ধৃতি থেকে তা স্পষ্ট হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর রাজনৈতিক দল মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। রাজনীতিবিদদের রাজনীতি করবার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের বন্দি করা হয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দ কথায় কথায় একটা কথা বলে থাকে যে, জিয়াউর রহমান না কি বহুদলীয় রাজনীতির প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে জে. জিয়া প্রথমে ক্ষমতায় আরোহণ করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিজের একটি দল তৈরি করেন এবং সে দল কিভাবে করেছে দি হেরাল্ড পত্রিকার উদ্ধৃতি তার প্রমাণ। জেনারেল জিয়া গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে দল গঠন করা এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেনি। ক্ষমতার মূল পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক এই গোয়েন্দা সংস্থা। তিনি নিজে গোয়েন্দা বিভাগের লোক ছিলেন বলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন—এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থা `এনএসআই ও ডিএফআই যা কিনা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই'- এর মডেলে তৈরি করেন। তার মাধ্যমে দল গঠন করবার সব প্রস্তুতি সমাপ্ত করেন। রাজনীতিধিদলের রাজনীতি করবার অধিকার কেড়ে নেন মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। ১৯৭৭ সালে লাইসেন্স বিতরণ করে দল গঠন করবার ঘোষণা দেন। জিয়ার অনেক অনুসারী অবশ্য দাবি করেন যে, তিনি নাকি গণতন্ত্র বিতরণ করে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা যদি একথাটাও স্বীকার করতেন যে, হাতিয়ার দিয়ে গণতন্ত্র কেড়েও নিয়েছিলেন তবে কথাটার পূর্ণতা পেত, সার্থকতাও লাভ করত। আজও দেশের রাজনীতি গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে। স্বৈরশাসকদের চরিত্র হচ্ছে কাউকে বিশ্বাস না করা। জিয়া ও এরশাদ কাউকে বিশ্বাস করতেন না বলেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করতেন। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। `প্রেস এডভাইস’ হতো মধ্যরাতে এবং তা মানতে বাধ্য করা হতো। সমগ্র দেশজুড়ে এদের নেটওয়ার্ক প্রচার ও অপপ্রচার চালাতে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। যে কোনো অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা অথবা কিছুদিনের জন্য হিপনোটাইজ করে বার বার মিথ্যা প্রচার করে গোয়েবলস কায়দায় তাদের অপপ্রচারটাকে সত্য বলে মনে করিয়ে ছাড়বার মতো ব্যবস্থাপনার জন্য কোটি কোটি টাকা এই সংস্থা খরচ করে থাকে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য দীর্ঘ এই ১৭ বছর এরা ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের যে নির্যাতন করা হয়েছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অনেকের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটেছে, অনেকে পরবর্তীতে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করেছে। জিয়া ও এরশাদ দুই সরকারের আমলেই এই প্রক্রিয়া চলেছে। ফলে বহু নেতা ও কর্মী অকালমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে এবং এখনও পড়ছে। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরকে এরশাদের আমলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ফলে দীর্ঘ সাত বছর রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন নজির বহু রয়েছে। ড্রাগ, অস্ত্র, সোনা, ঘড়ি ইত্যাদি নানা দ্রব্য চোরাকারবার ব্যবসায় এদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষমতাও তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। তাই দেখা যায় ক্ষমতা জনতার কাছে থাকে না- থাকতে পারে না।

 

ক্ষমতা জে. এরশাদ যখন রাখতে পারলেন না পুনরায় ক্ষমতা চলে গেল জে. জিয়ার দলে অর্থাৎ- একই জায়গা থেকেই ক্ষমতার হাতবদল হচ্ছে। জনগণকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতার খেলা খেলে যাচ্ছে যেন এক অদৃশ্য শক্তি।

 

আজ তাই প্রশ্ন, জনগণ এই বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে কবে। যে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে জে, জিয়া নিজে সে স্বৈরাচারকে হটালেও এখনও স্বৈরতন্ত্রই ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে জনগণকে শাসন ও শোষণ করে যাচ্ছে।

স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে জনগণ কি মুক্তি পাবে না?

 

(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ১০০-১০১)

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭