ইনসাইড বাংলাদেশ

বর্জ্যদূষণ ও অপরিকল্পিত নগরায়নে দূষিত হচ্ছে কক্সবাজার


প্রকাশ: 11/09/2023


Thumbnail

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী ও স্বাস্থ্যকর স্থান কক্সবাজার।এখন অপরিকল্পিত এবং অস্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিনত হতে যাচ্ছে।

 

 স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট না থাকায় কক্সবাজারে পাঁচশতাধিক হোটেল মোটেল-গেস্টহাউস রেষ্ট হাউসসহ , সাড়ে চার   হাজার আবাসিক হোটেল, বসতবাড়ি ও হ্যাচারি থেকে প্রতি বছর নির্গত ২৫০ টন বর্জ্য সাগরে মিশে যাচ্ছে। এতে  সাগরের পানি দুষণ ও  পরিবেশের পড়ছে বিরূপ  প্রভাব।  সাগরে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে । দূষণের মাত্রা আরো বাড়তে থাকলে পানিতে  দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবিষ্যতে কক্সবাজার বিমুখ হবে পর্যটক এমনটা মনে করেন আধুনিক কক্সবাজারের রূপকার সাবেক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ। এখনই এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহন করা নাহলে  পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। পরিকল্পিত নগরায়ন   প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে  এ শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লাখ লোক বেকার হয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেন পৌর মেয়র মাহবুবর রহমান চৌধুরী। এ অবস্থায় সাগরের পানি দুষণমুক্ত রাখতে কক্সবাজারে একটি সেন্ট্রাল এসটিপি স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের । কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডর নুরুল আবছার  বলছেন এসটিপি নিয়ে কাজ করছে তারা।





তথ্য মতে, কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন এলাকায় পাঁচ শতাধিক বাণিজ্যিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস রেষ্ট হাউস রয়েছে। রয়েছে ৭ শতের অধিক  রেস্তোরাঁও। কিন্তু শুধুমাত্র ৬ টি হোটেলে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) রয়েছে। আর কোন আবাসিক হোটেলে এসটিপি নেই। এছাড়া শহরে নির্মিত কোন আবাসিক ভবনেও নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে তাদের তৈরি বর্জ্য যাচ্ছে সাগরে। বিশেষ করে বর্ষাকালে মানব বর্জ্য ফেলা হয় সাগরে। সাথে যুক্ত হচ্ছে পাহাড় কাটার বালিও। এতে সাগরের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। মানব সৃষ্ট বর্জ্য সাগরের পানি দুষিত হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর। এ অবস্থায় একটি সেন্ট্রাল এসটিপি স্থাপনের দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠে।

 

 

সম্প্রতি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) পক্ষ থেকে ১৩৪টি হোটেল-মোটেল/গেস্ট হাউজ/কটেজকে ‘এসটিপি’ স্থাপন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মাত্র ৬ টি হোটেল এসটিপি রয়েছে বলে চিঠির উত্তরে বলা হয়। আর ৩৯টিতে ৩ চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক রয়েছে বলে জানানো হলেও বাকি ৮৯টি হোটেলে চিঠির কোন উত্তর দেয়া নি। এ অবস্থায় সেন্ট্রাল এসটিপি বসানো নিয়ে পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ এবং হ্যাচারি মালিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে কউক। সভায় কউকের প্রকৌশলী খিজির খান জানান, প্রতিবছর ২৫০ টন বর্জ্য সাগরে মিশছে। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ  পরিবেশ দূষণ ও বাস ষোগ্যতা হারাবে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজার।




সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্জ্যে সাগরের পানি দুষিত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হবে পরিবেশ। যার প্রভাব পড়বে সামুদ্রিক প্রাণী সম্পদের উপর। সৈকতে গোসল করতে না পারলে কক্সবাজার বিমুখ হবে পর্যটকরা। এতে পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার এবং এনভায়রমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু শরীফ মোঃ মাহবুব-ই-কিবরিয়া বলেন, সেন্টমার্টিনে পয়:বর্জ্যের কারণে ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটোরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কক্সবাজারে এর প্রভাব আরো বেশি পড়তে পারে। এতে চর্মরোগ ও ডিসেন্ট্রি রোগের প্রভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্লাস্টিক, জেলেদের জাল, পোড়া তেল, সেন্ডেলসহ অন্যান্য বর্জ্যের কারণে সাগরের পানি বিষাক্ত হয়ে প্রাণী জগতের ক্ষতি হতে পারে।

 

ওয়াটার্স কিপার বাংলাদেশ সেপটারের প্রধান নির্বাহী শরীফ জামিল বলেন , বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে কক্সবাজার ঘুরতে আসে পর্যটকরা। যদি তারা দেখে  সাগরের পানি নোংরা তাহলে ক্রমাগতভাবে কক্সবাজার বিমুখ হবে  পর্যটকরা। কেউ একবার এসে কক্সবাজারের পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে গেলে  আর কক্সবাজার আসবে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বেকার হবে এ শিল্প ব্যবসার সাথে জড়িতরা। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে।



ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পূর্বে নির্মিত হোটেলগুলোতে এসটিপি স্থাপন নিয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যার কারণে এসটিপি ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। এ সময় এসে তা অপসারণের সুযোগ নেই। সেন্ট্রাল এসটিপি বসানোর উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটা জানিয়েছেন কলাতলীস্থ হোটেল জোনের সভাপতি  সমিতির সভাপতি মুকিমখাঁন। 

 

হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, হোটেল/গেস্ট হাউজগুলো মাত্র ৪/৫ কাঠা জমির উপর নির্মিত। এসব হোটেল ভেঙে এসটিপি বসানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় একটি সেন্ট্রাল স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপণ করা হলে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

 

পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজার ইউনিট ম্যানেজার মো: রায়হান উদ্দিন বলেন, এসটিপি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভায় আমরা কথা বলেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জমি পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

 

বীচ ম্যানেজম্যন্ট কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শাহীন ইমরান  বলেন, কক্সবাজার কয়েকটি হোটেল ছাড়া আর কোন হোটেলে এসটিপি নেই। বিষয়টি দুঃখজনক। এসটিপির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এটিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা এসটিপির সম্ভাব্যতাও যাচাই করেছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় দ্রুতই একটি সেন্ট্রাল এসটিপি বাস্তবায়ন করা যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭