এডিটর’স মাইন্ড

নিষেধাজ্ঞার হুমকি বনাম বন্ধুত্বের সেলফি


প্রকাশ: 11/09/2023


Thumbnail

৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে শুরু হয় জি-২০ সম্মেলন। এ সম্মেলনে সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেলফি আলোচনার ঝড় তুলেছে। ছবি নাকি কথা বলে। ড. ইউনূস, আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যখন টানাপোড়েন, তখন এ ছবির নানা ব্যাখ্যা হবে। এ ছবির অর্থ নিয়ে নিশ্চয়ই আগামী কিছুদিন রাজনীতি মাঠে নানা বিতর্ক হবে। কেউ বলবে এটা শুধুই একটা সেলফি। এর কোনো মানে নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌজন্যতা দেখিয়েছেন মাত্র। এ সেলফি দিয়ে মার্কিন নীতি বা অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। আবার কেউ বলবেন, এ ছবি বলে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বদল করেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অস্বস্তি কেটে গেছে। এ সেলফি তার প্রমাণ। সেলফি বিতর্কে যে যাই বলুক না কেন, এ সেলফি কিংবা দিল্লিতে বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছবি বন্ধুত্বের প্রতীক। বাংলাদেশ নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নানা নিষেধাজ্ঞা হুমকি, তখন এ ছবিগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তির। দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব কূটনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ঢাকা যেন এখন বিদেশি ভিআইপিদের তীর্থকেন্দ্র। বিশ্বের বড় বড় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদভারে মুখরিত। ভিআইপি প্রটোকল দিতে দিতে সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তারা রীতিমতো ক্লান্ত। একটা সময় ছিল পশ্চিমা দেশের একজন ছোটখাটো মন্ত্রীকে বাংলাদেশে আনতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হতো। বিদেশি রাষ্ট্রের কেউ একজন এলেই তাকে নিয়ে মাতামাতি হতো। এটা অবশ্য ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী চিত্র। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল মাথা উঁচু করে। মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বে বাংলাদেশকে দেয় মর্যাদার আসন। সে সময় বাংলাদেশের বীরত্বগাথা দেখতে আসতেন বিদেশি বন্ধুরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের সংগ্রামে পাশে দাঁড়াতে আসত কেউ। কেউ আসত ষড়যন্ত্র করতে। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিদেশিরা যেন ‘বন্ধু অতিথি’ থেকে ‘প্রভু’ হয়ে যান। পরনির্ভর অর্থনীতি আর অবৈধ শাসকরা জনগণ নয়, পশ্চিমা প্রভুদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় কিছু পশ্চিমা পদলেহী, যাদের আদর করে বলা হয় ‘সুশীল’। তারা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, উন্নয়ন, মানবাধিকারের ব্যবসা করে। পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য তারা এনজিও বা উন্নয়নের দোকান খোলে। এসব দোকান চালানো হয় পশ্চিমাদের টাকায়। তারা পশ্চিমাদের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করে। ১৯৭৬ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন মার্কিন সিনেটর ম্যাক গর্ভান। তাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তার সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। একজন মার্কিন সিনেটরকে খুশি করতেই এমন কাণ্ড করা হয়েছিল। ভাবা যায়! বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা যখন প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন (৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২) বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রটোকল অনুযায়ী গভর্নরই তাকে (বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট) রিসিভ করবেন। এই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টই আবার বাংলাদেশ সফর করেন চার বছর পর। ৩ নভেম্বর, ১৯৭৬ সালে। এবার ম্যাকনামারাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে যান, সে সময়ে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান। জিয়া সে সময় একাধারে সেনাপ্রধান, উপসামরিক আইন প্রশাসক। অর্থ, স্বরাষ্ট্র, শিল্পসহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা। কার্যত তিনিই দেশ চালাচ্ছেন। বিমানবন্দরে উর্দিপরা জেনারেলকে দেখে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও বিস্মিত হয়েছিলেন। বিদেশি গণমান্য ব্যক্তিরা যেন বাংলাদেশে নিয়মিত আসেন, সে জন্য এরশাদ একজন ‘বিশেষ দূত’ নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব বিদেশি দেশে এসে বাংলাদেশ এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে সার্টিফিকেট দিতেন। নৈশভোজের পর ঢেকুর তুলে বলতেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি।’ এরশাদ টাকাপয়সা খরচ করে বিদেশ থেকে দাওয়াত সংগ্রহ করতেন বলেও দুষ্ট লোকেরা বলে বেড়াত। সে সময় বিদেশিদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সহায়তা পাওয়া। সহজ ভাষায় ভিক্ষা। বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে ক্ষুধা দেখতেন, দারিদ্র্য দেখতেন, বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখতেন। হাড়-জিরজিরে মানুষের হাহাকার দেখতেন। অভুক্ত মানুষের জীর্ণশীর্ণ বিবর্ণ চেহারা দেখিয়ে অর্থ চাওয়া হতো। বিদেশিরা কেউ দিতেন ঋণ এবং কেউ করতেন দান-খয়রাত। এর বিনিময়ে অবৈধ শাসকদের তারা বিভিন্ন বিষয়ে হিতোপদেশ দিতেন। এ উপদেশ মানা ছিল বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কীভাবে নির্ধারিত হবে তার সব প্রেসক্রিপশন আসত বিদেশ থেকে। মানলে ভিক্ষা পাবে, না মানলে ভিক্ষা বন্ধ। ভিক্ষা শুধু সরকার পেত না, পেত পশ্চিমা পদলেহী সুশীলরাও। এভাবেই চলছিল সবকিছু। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে আস্তে আস্তে পাল্টাতে শুরু করে বাংলাদেশ। দরিদ্র, পরনির্ভর, ভিক্ষা করে চলা দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করে। উন্নয়নের নীরব বিপ্লব শুরু হয়। আত্মনির্ভরতা বাড়তে থাকে সবক্ষেত্রে। দারিদ্র্যের হার কমতে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দ্রুত এগোতে থাকে। অসাধারণ উন্নয়ন হয় যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তিতে। বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশের ‘উন্নয়নের ম্যাজিক’ হয়ে ওঠে বিশ্বের বিস্ময়। হেনরি কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন, সেই বাংলাদেশ হয়ে ওঠে বিশ্বের উন্নয়নের রোলমডেল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়ে। বিভিন্ন বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশকে ডাকা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবাই উন্নয়নের গল্প শুনতে চায়। নিজের বাজেট, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া শুরু করে বাংলাদেশ। আমার বিবেচনায়, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার চূড়ান্ত রূপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। বিদেশি পরোক্ষ প্রভুত্ববাদ এবং আধিপত্যবাদের নিগূঢ় ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হয়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি। বড় বাজার। ব্যবসা এবং বিনিয়োগের আকর্ষণীয় ও লোভনীয় স্থান, সঙ্গে বঙ্গোপসাগর। আবার বাংলাদেশে বিদেশি অতিথিদের ভিড় বাড়ে। তবে এবার তারা ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বন্যা কিংবা দুর্যোগে বাংলাদেশের দুর্দশা দেখতে নয়, উন্নয়নের অভাবনীয় বিপ্লব দেখতে আসেন। বাজার এবং ব্যবসার সন্ধানে আসেন। বৈশ্বিক নতুন মেরূকরণের ফলে উপমহাদেশে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক প্রভাবশালী দেশই বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়। প্রাক্তন প্রভুরা লক্ষ করেন, এই বাংলাদেশ তো আর আগের বাংলাদেশ নেই। এই বাংলাদেশ তো আগের মতো সব কথায় ‘জি হুজুর’ করে না। এই বাংলাদেশ তো সব কথা শোনে না। প্রভুদের বলে ‘পার্টনার’। চোখে চোখ রেখে কথা বলে। সম্পর্ক করে নিজেদের স্বার্থে। প্রভুদের নির্দেশ, চোখ রাঙানিকে পাত্তা দেয় না। নড়েচড়ে বসে পশ্চিমা প্রাক্তন প্রভুরা। প্রভুদের পোষা ক্রীতদাসরাও উদ্বিগ্ন হয়ে যান। পশ্চিমা প্রভুত্ব না থাকলে ‘উন্নয়ন ব্যবসা’ চলবে না সুশীলদের। এনজিওর দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। এটা করা যাবে না, ওটা নিষেধ, সেটা করলে সর্বনাশ হবে এমন সতর্কবার্তা এখন নিত্যদিনের বিষয়। গত জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ২৪ জন মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেছেন। সর্বশেষ সফর করে গেলেন মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিকবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক। সামনে আরও অনেকেই আসবেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ওয়াশিংটনে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেন বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘুম হারাম। পাকিস্তানে কী হচ্ছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এসব নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, এটা তাদের (পাকিস্তানের) অভ্যন্তরীণ বিষয়। মিয়ানমারের গণতন্ত্র নিয়েও তাদের আগ্রহ নেই। অসুস্থ সু চির মুক্তি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র এখন সোচ্চার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সব আগ্রহ এখন বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার দেশগুলো ঘিরে। মধ্যপ্রাচ্য জো বাইডেনের হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেখানে এখন চীনের পতাকা উড়ছে। আফ্রিকায় চীন-রাশিয়ার যৌথ কৌশলে কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র। আর এ জন্যই সেখানে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যে আফ্রিকার চারটি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। যার প্রত্যেকটির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা। গণতন্ত্রের জন্য বিশ্ববিবেক কীভাবে সামরিক শাসনকে মদত দেয়? এসব প্রশ্ন করা যাবে না। কারণ বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা। তাদের সমালোচনা রীতিমতো ধৃষ্টতা। পিটার ডি হাস, ডোনাল্ড লু কিংবা আফরিনের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন তাদের পছন্দ অনুযায়ী না হলে বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তাদের কাছে ‘গুয়াতানামোর কারাগারে’ বীভৎস অমানবিকতাকেও হার মানায়। বাংলাদেশ নিয়ে কেন যুক্তরাষ্ট্রের এত আর্তনাদ, আহাজারি। কারণ বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভু মনে করে না। তাদের একান্ত অনুগত হয়ে সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করে না। বাংলাদেশ তার আদি কূটনীতিক অবস্থানে চলে গেছে। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা’ নয়। এ জন্য চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রেখেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেয় বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক করেই জাপানের সঙ্গেও অর্থনৈতিক মিত্রতা বাড়ায়। আন্তর্জাতিক প্ররোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুদ্ধে জড়ায় না, আলোচনাতেই সমাধান খোঁজে। মার্কিন চোখরাঙানি সত্ত্বেও ’৭১-এর বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়। বঙ্গোপসাগরে কারও একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দেয় না। আর এ জন্যই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বাংলাদেশ সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে এসে ‘জলের গান’ শুনে গেলেন। ব্রিকস এবং জি-২০ সম্মেলনে আলো ছড়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বেও সব প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তারই একঝলক দেখা গেল ৯ সেপ্টেম্বর। একটা ছবিতে দেখলাম বাইডেন কথা বলছেন শেখ রেহানার সঙ্গে। হাত ধরে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। পাশে দাঁড়ানো ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এ ছবিটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্মারক চিহ্ন। বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়, কারও দাসত্ব নয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ’৭১-এর মতো ভুল করবে না বলেই আমার বিশ্বাস। আমেরিকার অধিকাংশ জনগণই সংবেদনশীল, মানবিক। তারা আগ্রাসন এবং আধিপত্যবিরোধী। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্সন, কিসিঞ্জার নীতিকে সমর্থন করেনি মার্কিন জনগণ। যুক্তরাষ্ট্রেই ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ হয়েছে। মার্কিন জনগণ চাঁদা তুলে সহযোগিতা এবং সমর্থন করেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ দেশ থেকে প্রচুর ছেলেমেয়ে স্বপ্নের দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। প্রচুর বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণ করেছে। সেখানকার বহুমাত্রিক সংস্কৃতি, উদারনৈতিক সমাজ এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রশংসা করে সব বাংলাদেশি। বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে, প্রভুত্ব করে কেউ পদানত করতে পারেনি। এ বাস্তবতা বুঝতে হবে পশ্চিমাদের। বাংলাদেশ কম্বোডিয়া নয়। বাংলাদেশ নাইজার, ঘানা কিংবা কঙ্গো নয়। এ দেশের একজন জনগণও মার্কিনবিরোধী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বকে আরও গাঢ় করতে চায় প্রতিটি বাঙালি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেলফি কি সেই বার্তাই দিল। আমার প্রত্যাশা, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই এগিয়ে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি নয়, বন্ধুত্বের সেলফি চায় বাংলাদেশ।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল : poriprekkhit@yahoo.com



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭