ইনসাইড বাংলাদেশ

কেন পশ্চিমারা বাংলাদেশে পক্ষ বদল করল


প্রকাশ: 11/09/2023


Thumbnail

ব্রিকস সম্মেলন, জি-টুয়েন্টি সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেনের সেলফি এবং সর্বশেষ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সবকিছুর মাধ্যমে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে তা হল হাওয়া বদল হয়েছে। যে পশ্চিমা দেশগুলো কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করছিল, সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিল তারাই এখন ঘুরে গেল। কূটনীতিকরা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন পক্ষ বদল শুরু করছে। বিশেষ করে নির্বাচন এবং বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানের বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাব এমন ছিল যে তারা সরকার পরিবর্তন করতে চায়। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে তারা এখন সরে এসেছে বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এটি কেন সম্ভব হল তা নিয়ে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা।
 
বিএনপির নেতারা যেভাবেই জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ফটো সেশনকে চিহ্নিত করুক না কেন এটি সুস্পষ্ট একটি বার্তা দেয়। তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে এখন সরাসরি বড় ধরনের কোনো বিরোধে যেতে চায় না। এরকম পরিস্থিতি হলে অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে ছবি তুলতেন না। দীর্ঘক্ষণ আলাপও করতেন না। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান যদি সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক হত তাহলে ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশ সফরও করতেন না। সবকিছু মিলিয়ে দৃশ্যপট ক্রমশ পাল্টে যেতে শুরু করছে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে পশ্চিমারা পক্ষ বদল করছে। কেন এই পক্ষ বদল-এর পিছনে কূটনৈতিকরা মনে করছেন, সুস্পষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। 

১. ভারতের কূটনীতি: বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের পক্ষ বদলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করেছে ভারত বলে মনে করেন কোনো কোনো কূটনৈতিক বিশ্লেষক। ভারত তার নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়, সরকারের ধারাবাহিকতা চায়। বিশেষ করে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যেন নতুন করে সংগঠিত হতে না পারে সেটি ভারতের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের বিষয়। আর এজন্যই তারা মনে করে শেখ হাসিনার সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ভারত শুধু এই উপমহাদেশেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর। আর এ কারণেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে যদি বাড়াবাড়ি করা হয়, চাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে ফলাফল হিতে বিপরীত হবে। 

২. শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই: বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এখন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছেন। তার বিকল্প বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ নেই। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় আনলে তার পরিণাম পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য হিতের বিপরীত হতে পারে- এমন উপলব্ধি তাদের মধ্যে হয়েছে। 

৩. সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের উত্থান: পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এই উপলব্ধি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশে যদি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারকে চাপে ফেলা হয় এবং তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এদেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থানের একটা প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকিটা পশ্চিমা দেশগুলো নিতে চায়নি। 

৪. চীনের সঙ্গে দূরত্ব: বাংলাদেশ সচেতন ভাবেই গত এক বছর ধরে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। যদিও চীন এখনো বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার। কিন্তু তারপরও এই সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। যেটি পশ্চিমা দেশগুলো  ভালোমতোই পছন্দ করেছে। 

৫. অবাধ-সুষ্ঠ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস: পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যে আশ্বাস দিয়েছে সেই আশ্বাসকে বিশ্বাস করতে চায়। পশ্চিমারা মনে করছেন যে, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ না হয় তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কাজেই আগাম সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করা বা সরকারের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করাটা মোটেও যুক্তি সঙ্গত হবে না। আর এ কারণেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পশ্চিমারা আগে দেখতে চায় এবং সরকার কতটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করে সেটি বুঝতে চায়। 

আর এই সমস্ত কারণেই এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। পশ্চিমারা বাংলাদেশে পক্ষ বদল করেছে বলে মনে করেন অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭