ইনসাইড পলিটিক্স

এইচ টি ইমামের চেয়ার দখলে ৫ আমলার লড়াই


প্রকাশ: 12/09/2023


Thumbnail

এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার ছিলেন। এই কো-চেয়ারের ধারণাটি আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রথম এসেছিল ১৯৯৫ সালে, যখন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন শাহ এম এস কিবরিয়া এবং তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সামগ্রিক তদারকির জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় তাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার করা হয়। শাহ এম এস কিবরিয়া নিজে নির্বাচন করেননি বরং নির্বাচন পরিচালনায় কোথায় কি হচ্ছে, প্রশাসনের সাথে সমন্বয়, নির্বাচন কমিশনের সাথে সমন্বয়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। কিবরিয়াই পঁচাত্তরের পর প্রথম আমলা রাজনীতিবিদ, যিনি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং প্রশাসনিক বিন্যাসের মধ্যে নিয়ে আসেন। ফলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা ছিল অত্যন্ত গোছানো। এই ধারা অব্যাহত থাকে শাহ এম এস কিবরিয়া জীবিত থাকা অবস্থায়।

২০০১ এর নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং সে সময় তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার ছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১-এর অক্টোবরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়। এমপি থাকা অবস্থায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় তিনি নির্মমভাবে সন্ত্রাসের শিকার হন। বিএনপি জামাত জোট সরকার তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য হেলিকপ্টার পর্যন্ত দেয়নি। 

শাহ এম এস কিবরিয়ার অকাল মৃত্যুর পর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার হন আরেক আমলা এইচ টি ইমাম। এইচ টি ইমাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকারেও তিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদিও ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট খুনি মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেছিলেন এই এইচ টি ইমাম। তবে এইচ টি ইমাম নির্বাচন পরিচালনা করমিটির কো-চেয়ার হওয়ার পর কিবরিয়ার ধারাতেই প্রশাসন এবং নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজ করতে থাকেন। যদিও তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো এক-এগারোর সময় সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে সমঝোতা এবং সমন্বয় করা। তার পুরস্কারও তিনি পান। ২০০৮’এর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর এইচ টি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

এইচ টি ইমামের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কাউকে নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার করেনি। নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার করা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা রকম গুঞ্জন আলাপ আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কারো নামই ঘোষণা করা হয়নি। তবে নির্বাচন যখন এগিয়ে আসছে তখন নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার কে হচ্ছে, এই নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে। 

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ার হওয়ার জন্য পাঁচজন আমলার প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। 

রশিদুল আলম: রশিদুল আলম সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এবং তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের ঘনিষ্ঠ। দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক এই আমলা, ধানমন্ডি ৩ নম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে বসেন এবং নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর সে কারণেই রশিদুল আলম নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার হতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন যে তিনি অনেক বয়স্ক হয়ে গেছেন, এ কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে হয়তো কো-চেয়ার নাও করা হতে পারে।

কবির বিন আনোয়ার: কবির বিন আনোয়ার চোদ্দ দিনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে অবসরের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে প্রধানমন্ত্রী তাকে দলীয় কাজ দেখাশোনা করতে বলেন। কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে নিয়মিত সম্পৃক্ত রেখেছেন এবং এখন পর্যন্ত তিনি দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এইচ টি ইমামের জায়গায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদায়ন করা হয়নি। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এখনো তিনি এলপিআরে থাকার কারণে আইনগত জটিলতার কারণে তাকে এই পদায়ন করা হয়নি। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে কবির বিন আনোয়ারকে এ ধরণের পদে দেওয়া হবে এটি নিশ্চিত নয়। কারণ তিনি নিজেই সিরাজগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এমন একজন আমলাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে যিনি নিজে নির্বাচন করবেন না। 

আবুল কালাম আজাদ: আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রী সাবেক মুখ্যসচিব এবং এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার হতে পারেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এ নিয়ে তিনিও বিভিন্ন জায়গায় দেন দরবার করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু শাহেদ কেলেঙ্কারির পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ শিবিরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় তার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

মোহাম্মদ সাদিক: মোহাম্মদ সাদিক সাবেক শিক্ষাসচিব এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। ইদানিং তিনি রাজনৈতিক পাড়ায় ঘোরাফেরা করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। তিনিও দলীয় কার্যালয়ে বসতে চান, এইচ টি ইমামের আসনে যেতে চান। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় অচেনা এই মানুষটিকে এই ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

কামাল আবু নাসির চৌধুরী: কামাল আবু নসির চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটিতে তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন তিনি নির্বাচন এবং রাজনীতির দিকে মনোনিবেশ করেছেন। কুমিল্লার একটি আসন থেকে তার নির্বাচন করারও গুঞ্জন রয়েছে। আবার গুঞ্জন রয়েছে তিনি এইচ টি ইমামের চেয়ারে জায়গা পেতে পারেন। তবে সে ব্যাপারেও কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই পাঁচ আমলায় এখন এইচ টি ইমামের চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন। দেখার বিষয় কে জয়ী হন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭