ইনসাইড বাংলাদেশ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব


প্রকাশ: 12/09/2023


Thumbnail

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশ সফরের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যেকোনো দেশে অসাংবিধানিক পরিবর্তন নিন্দনীয়। অর্থাৎ সংবিধান বহির্ভূত কোন সরকারকে ফ্রান্স সমর্থন করবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই দেশের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে এই বক্তব্য দেওয়া হয়। এর ফলে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নাকচ করে দিল। শুধু ফ্রান্স নয়, অনেক পশ্চিমা দেশই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নাকচ করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বার বার বলছে, বিএনপি আসলে একটি অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আনতে চায়। আরেকটি এক-এগারো ঘটাতে চায়। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমাদের তাবেদার সরকারকে বাংলাদেশে বসাতে চায়। আর এর বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরি করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছিলেন। 

বাংলাদেশের বর্তমান যে সংবিধান রয়েছে সেই সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সংবিধান সম্মত নির্বাচনের যে বিধিবিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত রয়েছে তা পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের অনুকরণে। ভারত, যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যারা সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রেখেছে তারা যেভাবে নির্বাচন করে বাংলাদেশে ঠিক সেই একই পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে চায় তা হবে অসাংবিধানিক সরকার। এছাড়াও সুশীল সমাজ এবং কোনো কোনো মহল বাংলাদেশে একটি দীর্ঘ মেয়াদী অনির্বাচিত সরকার রাখতে চায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে তদবির করছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির দাবির প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায়নি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর কালে অসাংবিধানিক ধারাকে প্রতিহত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে আ ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্র ফ্রান্স তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করে দিল।

বিভিন্ন কূটনীতি সূত্রগুলো বলছে, ফ্রান্সের এই অবস্থানের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থানও একইভূত হবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রান্স অত্যন্ত প্রভাবশালী দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির ব্যাপারে কিছু বলেনি। ভারত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করেছে বহু আগে। বরং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। বরং ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসিতে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশে সেভাবেই নির্বাচন যেন হয়। তবে নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হয় সেটি নিশ্চিত করতে চায়। আর এই বিশ্ব জনমত গঠনের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে প্রত্যাখ্যাত হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের দাবি সামনে চলে এলো। এটি বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের গুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা। তাছাড়া ফ্রান্সের এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করবে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দাবি নিয়ে যে কূটনৈতিক লড়াই সেই লড়াইয়ে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ল। বিএনপি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে এই দাবির সমর্থনে নানা যুক্তি উপস্থাপন করছিল। কিন্তু কেউই তাদের পক্ষে কোনো বক্তব্য না দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অনির্বাচিত সরকারের দাবিকে সরাসরি নাকচ করে দিলেন দিল ফ্রান্স।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭