ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 13/09/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে নানামুখী চাপে রাখবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে চাপে রেখেই আগামী নির্বাচন করতে চায় দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি। আওয়ামী লীগ মনে করে, বিএনপির সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতা নয়, কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় নয়, বরং বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির ওপর অব্যাহত চাপ রেখে তাদেরকে কোণঠাসা করেই নির্বাচন করতে হবে।

 আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল মনে করেন, বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে না। যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসে তাহলেও তারা খণ্ডিতভাবেই এই নির্বাচনে আসবে। এরকম অবস্থায় নির্বাচন বানচাল বা ভন্ডুল করতে যেন বিএনপি না পারে, সেই জন্যই তাদেরকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই চাপ নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। 

বিএনপিকে যেসব বিষয় দিয়ে আওয়ামী লীগ চাপে রাখতে চাইছে তার মধ্যে রয়েছে: 

১. বেগম খালেদা জিয়া: বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো অবস্থাতেই কোনো রকম সমঝোতা ছাড়া বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে না। বেগম খালেদা জিয়া গত ১৩ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, এ রকম আবেদন বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো অনুমতি দেওয়ার চিন্তা সরকারের নেই। এই বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখা হবে। বিএনপির অনেক নেতাই স্বীকার করছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বা তার চিকিৎসার বিষয়টির কারণে বিএনপি সবকিছু উজাড় করে দিয়ে আন্দোলন করতে পারছে না। সব সময় তাদের একটা পিছুটান রয়েছে।

 বিএনপির নেতারা স্বীকার করেছেন, আন্দোলনের গতি বাড়ালে যদি বেগম খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়, সেটি তাদের জন্য বিপর্যয় করা হবে এবং এখানে নেতাকর্মীরাও হতাশ হবে। এটি সরকারের অন্যতম একটি চাপে রাখার কৌশল।

২. বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা: সরকার ইতিমধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা অতীতে হয়েছে, সেগুলোকে সচল করেছে। অনেকগুলো মামলায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে। নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, এই নীতিতে সরকার এই প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না।

বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বড় অংশ এখন নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেছেন। আমানুল্লাহ আমানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে? গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মোহাম্মদ টুকুর বিরুদ্ধেও। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদেরকে ‘দৌড়ের উপর থাকতে হবে’-বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আর এরকম বাস্তবতায় বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার সুযোগ বিএনপি পাবে না। 

৩. তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা: যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই সংলাপে তারেক জিয়ার প্রসঙ্গটি উঠেছে। পররাষ্ট্র সচিব জানতে চেয়েছেন, তারেক জিয়া কিভাবে যুক্তরাজ্যে আছে এবং তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েই সেখানে তিনি অবস্থান করছেন। তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সরকার সচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে বিএনপি একটি বাড়তি চাপ অনুভব করবে। 

৪. পাল্টা সহ সমাবেশ: বিএনপিকে কখনোই মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না। বিএনপি যখন যে কর্মসূচি দেয় তার বিপরীতে আওয়ামী লীগও ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে। রাজপথ যেন বিএনপি কোনোভাবেই দখল না পায়, সেই বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাদের নজরে রয়েছে এবং সমান্তরাল কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজেরাও মাঠে থাকবে। 

৫.সুরক্ষিত ঢাকা: আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বিএনপির প্রধান টার্গেট হলো ঢাকাকে দখল করা এবং সেই লক্ষ্যেই তারা বিভিন্ন কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, ঢাকাকে যদি সুরক্ষিত রাখা যায়, বিএনপির আন্দোলন থেকে মুক্ত রাখা যায়, সেক্ষেত্রেই নির্বাচন হবে নির্বিঘ্নে। আর এই কারণেই ঢাকাকে সব আন্দোলন মুক্ত রাখার একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

 এভাবে বিএনপিকে চাপে রেখে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করে ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭