ইনসাইড থট

বিমানবন্দরে দশ ছিদ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা


প্রকাশ: 14/09/2023


Thumbnail

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পারইহাটি গ্রামের শিশু জোনায়েদ মোল্লাকে দেখতে তার বাড়িতে লোকসমাগম বাড়ছে। বাড়বেই তো। সে তো এখন জাতীয় হিরো! দুনিয়ার কোন দেশে যেটি সম্ভব না, সেটি সে করে দেখিয়েছে। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট, বোর্ডিং পাস ছাড়াই প্লেনের সিটে বসে পড়েছে। আর একটু হলেই পৌঁছে যেত দুবাই। ভাগ্যিস, সেটি হয়নি। তাহলে, সারা দুনিয়ার লোক ভীড় করতো পারইহাটি গ্রামে। জুনায়েদ তখন হয়ে যেত 'বিশ্ব হিরো'! আল্লাহ যেটা করেন, সেটা ভালোর জন্যই করেন। আপাতত তাকে দেশের প্রধান বিমান বন্দরের একটি উড়োজাহাজ থেকে বাড়িতে ফেরানো গেছে।

গাড়ি থেকে দেশের প্রধান বিমান বন্দরে নামার পর কতই না চেক। গত দু দশক ধরে নিয়মিত আসা যাওয়া করছি। এইতো সপ্তাহ দুয়েক আগে এলাম দেশ থেকে। প্রয়োজনীয় ও কিছু অপ্রয়োজনীয় এসব চেকের ঘাটতি কখনো দেখিনি। গাড়ি থেকে নামার পর বিমান বন্দরের আনসার বললো, পাসপোর্ট দেখান, টিকেট দেখান। দেখানোর পর স্ক্যান করার লাইনে দাঁড়াতে দেয়। লাগেজ স্ক্যানের পর সেগুলো সামাল দেয়ার আগেই আবার পাসপোর্ট টিকেট। এর মধ্যে দুবার চেক শেষ।

জুনায়েদ চেক ইন কাউন্টারে নিশ্চয়ই যায়নি। তাই সে চেকটি ধরলাম না। তাহলে তৃতীয় চেক ধরা যাক ইমিগ্রশনে ঢোকার মুখে। সেখানে ঘোমরা মুখে দেখতে চায় পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস । এবার চতুর্থ চেক ইমিগ্রশনে। কত না প্রশ্ন সেখানে। কেন যাবেন, কি করেন, বেতন কত, ঐ দেশের আইডেন্টিটি কার্ড কই, আরো কত অবান্তর প্রশ্ন। সেসব সামলানোর পর পঞ্চম ধাপ। এই অপ্রয়োজনীয় ধাপটি বিশ্বের আর কোথাও দেখিনি। তিনি আরো কঠিন একটি ভাব নিয়ে পাসপোর্টের ছবির সাথে যাত্রীর চেহারা মেলান। পাসপোর্টের পাতা খুঁজে খুঁজে বহিঃগমন সিল আছে কিনা, সেটা চেক করেন। এর পরে যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচা যায়।

বাড়ির লোকদের আগেই বলে দেই, এয়ারপোর্টে নামার পর থেকে বড়ই পেরেশানিতে থাকি। গোমড়া মুখের চেহারা দেখে দেখে, অসংখ্য অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, পঞ্চম ধাপ পেরিয়ে হাফ ছাড়ার স্থানে এসে আমি বাড়িতে ফোন দিব। গত বিশ বছর ধরেই তাই করছি! এখানে এসে আমিই ফোন দেই।

অতঃপর ষষ্ঠ ধাপ। সেখানে সাঁড়াশি চেক। জুতা, বেল্ট, কোট- কত কিছুই না সেখানে খুলতে হয়। আবার তেনারা পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস দেখেন। জুতা, বেল্ট, মোবাইল, কেবিন ব্যাগ এগুলো সামাল দিতে না দিতেই একটি টেবিলে দাঁড়ানো ব্যক্তি বোর্ডিং পশে সিল মারেন। সেটি সপ্তম ধাপ। এরপর উড়োজাহাজে ডাকাডাকি শুরু হলে অষ্টম ধাপ। তিনি মূলত বোর্ডিং পাসের বোর্ডিং গ্রুপ দেখেন। অতঃপর জাহাজে উঠতেই যাঁরা গুড মর্নিং বা গুড ইভনিং বলেন, বলেন ওয়েলকাম টু বোর্ড, তাঁরা হাতে বোর্ডিং পাস দেখেন। এটিকে নবম ধাপ বলা যায়। দশম ধাপে একজন বিমানবালা বোর্ডিং পাসে সিট নম্বর দেখে বসার স্থান দেখিয়ে দেয়। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট, বোর্ডিং পাস ছাড়া জুনায়েদ মোল্লা কিভাবে দশ ধাপ পেরিয়ে উড়োজাহাজের সিটে বসে পড়লো, তা আসলেই অবাক বিস্ময়! আসলেই সে বিস্ময় বালক! তাই তাকে দেখতে গ্রামের বাড়িতে ভিড় করাটা যুক্তিসঙ্গত।

যে বালক পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট, বোর্ডিং পাস ছাড়া উড়োজাহাজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, সে অনায়াসে বোমা নিয়েও সেখানে যেতে পারে। এখন নিজের ও পরিবারের জীবন নিয়ে শংকিত। এই বিমান বন্দর ব্যবহার করা নিয়েও শংকিত। কিন্তু আমারতো কোন উপায় নেই! নিজ দেশ, আত্মীয় স্বজন- সবাই দেশে। শত শংকা নিয়েই যেতে হবে। কিন্তু একজন ভিনদেশি? তাঁর যদি অন্য এয়ারপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ থাকে, সে কেন এই শংকার মধ্যে যাবে?

পত্রিকার মারফত জানলাম, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দশ জন বরখাস্ত হয়েছে। এখানেই যেন ব্যাপারটি শেষ না হয়। পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেটি আপনার আমার সবার প্রয়োজনে। দরকার হলে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বারো বছরের বালক অন্যের গা ঘেঁষে ছিল বলে দায় এড়াবার সুযোগ নেই। আমার ছোট কন্যার বয়স যখন দু বছর, তখন থেকে আমরা প্রবাসী। ছোট কালে সে শুধু গা ঘেঁষেই থাকতো না, কোলেও থাকতো, ঘুমিয়েও থাকতো। তবুও দুনিয়ার সব খানেই তার পাসপোর্ট, ভিসা, বোর্ডিং পাশ দেখানো লাগতো, সবখানেই। একটি বালক বিদেশ যাবার কোন কাগজপত্র ছাড়া দেশের প্রধান বিমানবন্দরের দশটি নিরাপত্তা ধাপ নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল। এটিকে এখন আর সহজভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই । বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিয়ে এখন কি বলবেন? এটাকে কি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবেন? নাকি বলবেন, দশটি ছিদ্রযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা?

 

লেখক: প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭