ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকার কেন আক্রমণাত্মক?


প্রকাশ: 15/09/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে ইস্যুগুলো সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে, চাপের হতে পারে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে, সেই সব বিষয়গুলো নিয়ে সরকার আক্রমণাত্মক। এই চাপের কাছে নতি স্বীকার তো নয়ই, বরং পাল্টা চাপ সৃষ্টি করে সরকার এই ইস্যুগুলোকে মোকাবিলা করতে চাইছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই সরকারের আক্রমণাত্বক ভূমিকা সুস্পষ্ট হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা সরকার দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি এবং সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিন বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করেছেন কলকারখানা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী। সবকিছু মিলিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি সরকারের নয়, এটি শ্রমিকদের মামলা। 

সরকারের জন্য আরেকটি মাথাব্যথার বিষয় হল ‘অধিকার’। ‘অধিকার’ নামের এই মানবাধিকার সংগঠনটি বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি সংগঠন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খান এই এনজিওটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। গতকাল আদালত এক দশক আগের ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানকে দুই বছর করে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। একই সঙ্গে তাদের দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

 এই রায় প্রকাশের সাথে সাথেই বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস, ইউরোপের পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে; বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সংশয়ের কথা জানিয়েছে। আদিলুর রহমান খানের মামলা যখন আদালতে রায় প্রদান করা হচ্ছিলো, ঠিক সেই সময়ে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিলো।  

যদি প্রস্তাবটির দিকে একটু গভীরভাবে নজর দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, এই মানবাধিকার প্রস্তাবটির উদ্যোগ নেওয়ার মূল কারণ ছিল অধিকারের প্রসঙ্গটি। আর এ কারণেই অনেকেই মনে করেছিল, সরকার হয়তো এই মামলার ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করবে। কিন্তু সেটি না করে সরকার তার অবস্থানে অটুট রয়েছে। অন্যান্য বিষয়গুলোতেও সরকার কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কেন আক্রমণাত্মক? 

সরকারের দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী বলেছেন, সরকার আক্রমণাত্মক নয়। বরং সরকার যে এই সমস্ত মামলা এবং বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি প্রমাণের চেষ্টা করছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি অসত্য কথা বলে, অর্ধেক সত্য উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক মহলকে এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তিই শুধু নয়, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

 সরকার যতই মুখে বলুক না কেন, এটির সাথে সরকারের সম্পর্ক নেই; তবে এই মামলাগুলোর ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ রয়েছে এবং সরকার মামলাগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সে ব্যাপারে তার অভিপ্রায় গোপন রাখেনি। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, সরকার যে বিদেশি চাপ ভয় পায় না বা বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না, সেটি প্রমাণের জন্যই বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। 

সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলা ইসাইডারকে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন কোনো পরাধীন রাষ্ট্র নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র এবং আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। কাজেই কেউ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যদি হস্তক্ষেপ করে, সেটা অনিভিপ্রেত। আর এ কারণেই সরকার যে এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না, তা প্রমাণ করা হচ্ছে এই সমস্ত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে দিয়ে। এখন দেখার বিষয় সরকারের এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপর কি প্রভাব ফেলে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭