ইনসাইড পলিটিক্স

চাইলেও কেন নির্বাচনে যেতে পারবে না বিএনপি


প্রকাশ: 15/09/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি আসবে না এটি কোটি টাকার প্রশ্ন। বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও বলা হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। এই ধরনের নির্বাচন তারা করতেও দেবে না। তবে বিএনপির  ভেতরে ভেতরে অনেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, বিএনপি আসলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে অনীহাই প্রকাশ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেছেন, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যেখানে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। নির্বাচনে যাওয়া বিএনপির জন্য অসম্ভব। বিএনপির এই নেতার বক্তব্য ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় ৫ টি কারণে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়াটা কঠিন এবং এবং দুরহ হয়ে গেছে। 

১. শীর্ষ নেতাদের অযোগ্যতা: বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া এখন নির্বাচনের জন্য অযোগ্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তর্কের খাতিরে যদি আমরা ধরেও নিই যে, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবে। সেক্ষেত্রেও সেই নির্বাচনে বিএনপি যে সরকার গঠন করবে সেই সরকারে বেগম জিয়া বা তারেক জিয়া কেউই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এমনকি সংসদ সদস্যও হতে পারবেন না। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি মনে করছে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক না করে তাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয়। 

২. বহু প্রার্থী অযোগ্য: বিএনপির হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিএনপির ৭৩ জন প্রার্থী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হয়েছেন। এলাকায় যারা জনপ্রিয় এবং সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন এরকম প্রার্থীদেরকে বেছে বেছে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। তারা বলছেন যে এমন সব জনপ্রিয় নেতাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে এবং তাদেরকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমানউল্লাহ আমান এবং ইকবাল মাহমুদ টুকুর উদাহরণ দেন বিএনপির ওই নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে পাঁচ লক্ষাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং চার শতাধিক বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা মামলায় দণ্ডিত হয়ে নির্বাচনের অযোগ্য হয়েছেন। এরকম অবস্থায় একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন করে কিভাবে? এই প্রশ্নটি বিএনপি নেতাদের। প্রার্থী সংকটের কারণে বিএনপি চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না বলে নেতারা মনে করছেন। 

৩. সরকারের অনাগ্রহ: অনেক নেতাই মনে করছেন যে, সরকার নিজেই চায় না যে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তার যে পরিস্থিতি হোক না কেন বিএনপি ভালো করবে। কারণ সরকারের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপিকে বাদ দিয়ে সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। আর তাই ন্যূনতম নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকার অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।

৪. আন্দোলন থেকে সরে আসা হবে ভয়ঙ্কর: বিএনপির নেতা মনে করছেন বার বার আন্দোলন থেকে পিছুটান দেওয়া হবে বিএনপির  জন্য ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী একটি বিষয়। কারণ এর ফলে কর্মীদের আস্থা থাকবে না। বিএনপির তৃণমূলের নেতারা আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথায় চলবেন না। দল নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং দলের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। এই কারণেই বিএনপি সংগঠন টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই নির্বাচনে যেতে পারে না। 

৫. সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্ররোচনা: সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মহল চাইছে না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বরং বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে একটি যদি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়, সেই রাজনৈতিক শূন্যতাকে পুঁজি করে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মহল এবং সুশীল সমাজের লক্ষ্য। আর এ কারণে তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭