ইনসাইড টক

‘এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, বাংলাদেশে মানবাধিকার ধ্বংস হয়ে গেছে’


প্রকাশ: 16/09/2023


Thumbnail

‘মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যত্যয় কিছু কিছু আছে- এটাতো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। কিন্তু তাই বলে মাস স্কেলে (সাধারণ জনগণের মধ্যে) মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে- এ ধরনের কথা বলার কোনো অবকাশ নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বলতে হবে যে, এই ক্ষেত্রে (ক্ষেত্র চিহ্নিত করে) বা এই বিষয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মানবাধিকার একেবারে চরম লঙ্ঘন হয়েছে বা একটা আশঙ্কাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে- এটা বলতে হবে। আর বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই বা বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ধ্বংস হয়ে গেছে, খারাপ হয়ে গেছে- এটা বলার কোনো অবকাশ আছে। এ ধরনের কোনো ব্যাপার নাই।’ -বলছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।  

তিনি বলেন, ‘আপনি অদিলুর রহমান সাহেবের কথা বললেন, তিনি মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন, তিনি কতটুকু মানবাধিকারের জন্য কাজ করেছেন, সেটাইতো প্রথমে দেখা দরকার। আর ওনার বিরুদ্ধে যদি শাস্তির কোনো ব্যবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে শাস্তিটার জন্য তিনি যদি মনে করেন যে, এটি ঠিক হয়নি, তাহলে-তো অপিলে যেতে পারেন। আইনের সুনির্দিষ্ট ধারায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন, তিনি আপিল করতে পারেন। তিনি যদি মনে করেন, ঠিক হয়নি, তাহলে অপ্রমাণিত করার জন্য প্রচেষ্টা নিতে পারেন। আমি যেটা দেখি যে, উনার বিরুদ্ধে যে সমস্ত কথাগুলো বলা হয়েছে, উনিতো সেটা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন নাই। কারণ তিনি-তো কিছু কিছু তথ্য দিয়েছেন, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং সেগুলো আমাদের দেশ সম্পর্কে যেমন একটা খারাপ চিত্র তুলে ধরে, একই সাথে আমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে একটা উস্কানিমূলক ব্যবস্থার সৃষ্টি করে, যা কখনোই উচিত নয়। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ একটি ধর্মীয় ব্যবস্থায় এই দেশে আছি। এখানে যদি কেউ, সব সময় ধর্মীয় বা ইত্যাদি পার্টি করে থাকে, তাদেরকে যদি এ ধরনের কথা বলা হয় তাদের জানার জন্য, তাহলে-তো এটা অনেকটা উস্কানিমূলক হয় এবং দেশে ধর্ম ব্যবস্থায় একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এটা আমরা কখনোই কামনা করি না এবং বাইরের দেশুগুলোও সে ধরনের ইম্প্রেশন দিতে পারে- এটাও সঠিক নয়। এতে করে আমাদের সম্মানহানি হয়।’        

সম্প্রতি ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘অধিকার’ নামক একটি মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও সংস্থার সম্পাদক আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুই বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। ২০১৩ সালের ৫ই মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও তাণ্ডব নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘অধিকার’র সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও সংস্থাটির পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর পরই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এছাড়াও বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের দায়ের করা মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব বিষয় নিয়েই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এসব বিষয় নিয়েই কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-এর সাথে। তিনি বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রকৃত মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা। পাঠকদের জন্য বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন আহমেদ- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের বিশেষ প্রতিনিধি আল মাসুদ নয়ন।  

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘আমরা নিজেদের মধ্যে আমদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে বলতে পারি। কিন্তু বাইরের মানুষের কাছে এমন ধরনের কোনো ধারণা দেওয়া উচিৎ নয় যে, যেটা সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করার মতো কোনো অবস্থান নেই। সেজন্য আমি বলব, এ ধরনের কোনো কথা দাঁড়ায় না। উনার (আদিলুর রহমান) যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি উচ্চ আদালতে যেতেই পারেন। উচ্চ আদালতে তার সঠিক বিচার চাইতেই পারেন।’

‘আদিলুর রহমানের বিচারের রায় এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার- এই দুই বিষয়ের উপরই কি বাংলাদেশের মানবাধিকারের সকল বিষয় নির্ভর করে?’ -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদমই না। এগুলোর উপর কেন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নির্ভর করবে। এগুলো হলো, কতগুলোর ব্যক্তির উপর, কতগুলো ঘটনা, যেখানে তারা কেউ কেউ এমন কিছু কথা বলেছেন, যেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং সেগুলো মামলা হিসেবে গিয়েছে এবং সেগুলো তাদেরকে প্রমাণ করার জন্য বলা হয়েছে, তারা-তো সেটা প্রমাণ করতে পারেননি। আরেকটা কথা যেটা বললেন, যিনি বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে পরিচিতি লাভ করেছেন, তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, সম্মানিত অবস্থানে গিয়েছেন। কিন্তু যে কোনো কেউ, তিনি যাই করুন না কেন, কেউই আইনের উপরে নয়। সুতরাং আইনের সেই সুনির্দিষ্ট অবস্থানে গিয়ে তিনি প্রমাণ করুন যে, তিনি অন্যায় করেননি। আর যদি অন্যায় না করে থাকেন, তাহলে উনার কোনো ক্ষতি হবে না, উনার অপরাধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেটা প্রমাণ করার সুস্পষ্ট অবস্থান আছে, সুবিধা আছে। আর যদি প্রমাণ না করেন, তাহলে কেউই-তো বিচারিক অবস্থার বাইরে নয়। আজকে আমি যদি অন্যায় করি, আমার যেমন বিচার হবে, আমার চেয়ে উপরে যিনি আছেন, অনেক উপরে, তারও তাইই হবে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকেন, তাহলে-তো তিনি বলতে পারেন না, আমি বিখ্যাত ভালো মানুষ, আমাকে কেন ধরা হলো?- এগুলোর উপরে আমাদের দেশের মানবাধিকার শেষ হয়ে গেছে, খারাপ হয়ে গেছে- এগুলো বলার কোনো অবকাশই নেই।’

‘আপনি কি মনে করেন, সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়, সেটা আসলে মানবাধিকারের আওতায় পড়ে না?’- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারটা আসলে কি? মানবাধিকার হলো মানুষের অধিকার। মানষের অধিকার হলো ন্যায়ানুগ অধিকার। ইউনিভার্সেল ডিক্লিয়ারেশন অব হিউম্যান রাইটস-এ সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আমাদের সংবিধানেও ২৭ থেকে ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনগুলো মানবাধিকার এবং এগুলো প্রত্যেকটি আপনি দেখুন। এগুলো হলো ন্যায়ানুগ প্রাপ্তির অধিকার। মানুষের যেটা চাহিদা যেটা ন্যায়ানুগ, সেটা অধিকার। কারো অন্যায় বিষয়টাতো অধিকার নয়। বিষয়টি অনেক স্পষ্ট, আপনি সংবিধানের অনুচ্ছেদের সাথে মিলিয়ে দেখুন, এগুলো সংবিধানের সাথে যাচ্ছে না। যদি না যায়, তাহলে উনারা চাইলেই সেগুলোকে অধিকার হিসেবে বলতে পারেন না। বরং একটা অন্যায় করে সেগুলো চাপিয়ে দেওয়ার মতো একটা প্রচেষ্টা, সেটাতো সঠিক নয়।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭