ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ কেন চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক


প্রকাশ: 16/09/2023


Thumbnail

কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রার্থীরা চাইতেন যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। বিএনপির অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে—এমনটি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে দেখা গেছে যে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ নেতাই চায় না যে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বরং বিএনপি  ছাড়া একটি ভালো নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তাতেও তার ইঙ্গিত পাওয়া। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে হলো যে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে। কোন দল অংশগ্রহণ করল না করল সেটি দেখার বিষয় না। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বক্তৃতায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের এরকমই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তাদের জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না। আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও একই ভাষায় কথা বলছে। সুস্পষ্ট ভাবেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বাদ রেখেই একটি নির্বাচনের রূপ পরিকল্পনা তৈরি করছে। কেন আওয়ামী লীগ চায় না যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিশেষ করে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচন একটি বড় শর্ত সকল দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেটি তাদের একটি প্রত্যাশার জায়গা। তারপরও কেন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে চায়। এর কারণ হিসাবে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তব্য গুলো দিচ্ছেন তাকে মোটামুটি ভাবে ভাগ করা যায়; 

১. নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা: আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে তারা আসবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, বিতর্কিত করতে এবং নির্বাচন যেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অগ্রহণযোগ্য হয় তা প্রমাণের জন্য। জয়ের জন্য বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। কাজেই এইরকম একটি নির্বাচন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে, পদে পদে তারা নানা রকম ইস্যু তৈরি করবে। একটির পর একটি অভিযোগ উত্থাপন করবে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করবে। যেমনটি তারা করেছিল ২০১৮-এর নির্বাচনে। 

২. সন্ত্রাস সহিংসতা বাড়বে: আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাস অহিংসতা বাড়বে এবং এর মধ্যে দিয়ে দেশে একটি অস্থির অবস্থা তৈরি হতে পারে। সেখানে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবও ঘটতে পারে। এই কারণেই বিএনপিকে দূরে রেখেই নির্বাচন করা অত্যন্ত ভালো। 

৩. বিএনপি নির্বাচনে ভালো করতে পারে: বিএনপি ২০০৮ বা ২০১৮-এর চেয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ভালো ফলাফল পেতে পারে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে দলের শীর্ষ দুই নেতা অনুপস্থিত থাকলেও বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে বিভক্ত হয়নি এবং বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এখনো বিএনপি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এটা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বীকার করেন। আর এ কারণেই তারা মনে করেন যে এরকম একটি ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। 

৪. বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে: আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন এবারের নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহন না করে তাহলে সংগঠন হিসেবে বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে। কারণ দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন, সংগঠনের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়বে এবং দলের নেতৃত্বের একটি অংশ আস্তে আস্তে ছিটকে পড়বেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। 

৫. আআন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রমাণ করা বিএনপি গণতন্ত্র বিরোধী: এই নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে মূলধারার রাজনীতি থেকে বিএনপিকে কেবল বিচ্ছিন্নই করা যাবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রমাণ করা যাবে যে বিএনপি একটি গণবিরোধী রাজনৈতিক দল। তারা গণতন্ত্র চায় না বরং সন্ত্রাস সহিংসতা চায়। আর এই সমস্ত কারণেই আওয়ামী লীগ এখন চাই না যে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭