ইনসাইড পলিটিক্স

ক্ষমতাসীন দলের দ্বন্দ্বে অশান্ত চট্টগ্রামের খুলশী-পাহাড়তলী


প্রকাশ: 17/09/2023


Thumbnail

চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন দলের দ্বন্দ্বে অশান্ত হয়ে উঠেছে নগরীর খুলশী ও পাহাড়তলী থানা এলাকা। গত পাঁচ দিনে পাশাপাশি দুটি থানায় ছুরিকাঘাতে দুজনের মৃত্যু হয়। একটি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. হোসেন মান্না। অপরটিতে আবদুর রহমান সুজন নামে এইচএসসি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। দুটি ঘটনায়ই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে সংঘাতে জড়িয়েছেন। খুন করতেও দ্বিধা করছেন না তারা।

সর্বশেষ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান ক্যান্টিন গেট এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হয় সুজন। একই ঘটনায় মো. ফরহাদ আলী জিসান নামে এক তরুণকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই তরুণের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। 

শনিবার সুজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আবদুল কাদের সবুজ থানায় মামলা করেছেন। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সুজন এইচএসসি পরীক্ষা দিতে নোয়াখালী থেকে এসে খুন হয়। এদিকে সুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে খুলশী থানা পুলিশ। শনিবার তাদেরকে আদালতে পঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক। তারা হলেন মো. হাবীব হোসেন মুন্না, মো. রাকিব হাসান, মো. সজিব ও মো. হৃদয়।

সুজন খুন হয় যে কারণে: শুক্রবার বিকেলে আমবাগান ক্যান্টিন মোড় থেকে শাহজাহান মাঠের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল মো. রাশেদুল আলম ইমন। এ সময় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইমনের গা ঘেঁষে দ্রুতগতিতে যায়। ওই রিকশাচালককে সাবধানে চালানোর জন্য ধমক দেয় ইমন। তাতেই ছুরিকাঘাতের ঘটনার সূত্রপাত।

প্রথমদিকে ইমন এবং রিকশায় থাকা পাঁচ যাত্রী হাবীব হোসেন মুন্না, রাকিব হাসান, বাদশা, সজিব ও হৃদয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে দুই পক্ষ তাদের বন্ধুবান্ধবকে খবর দেয়। ১০ মিনিটের মধ্যে উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত হলে একপর্যায়ে সুজনকে ছুরিকাঘাত করে মুন্না। সুজনকে সরিয়ে নিতে গেলে সাগর ওরফে মুরগি সাগরের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় ফরহাদ আলী জিসান।

দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া জিসানকে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শুক্রবার রাতেই জিসানকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সংঘাতে জড়ানো দুটি পক্ষ সরকারদলীয় দুই নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সুজন নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত। অপরপক্ষ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের টাইগারপাসের বাদশা ও সিফাতের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। নিহত সুজন নোয়াখালীর সেনবাগ থানার জামালপুরের মৌলবি আবদুল আজিজের বাড়ির মৃত আবদুল বাতেন রিপনের ছেলে। ৮ মাস আগে সুজনের বাবা মারা যাওয়ায় তাদের পরিবার গ্রামে বাড়িতে চলে যায়।

বন্ধু আমির হোসেন সাগর বলেন, সুজন মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ থেকে গতবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাতে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ে খারাপ করে। এবার সেই দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে নোয়াখালী থেকে এখানে এসেছিল। সুজনের পরীক্ষা দেওয়া শেষ হয়েছে।

শনিবার সকালে নোয়াখালী চলে যাওয়ার কথা। অথচ সে না ফেরার দেশে চলে গেল। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, বাগবিতণ্ডা থেকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সুজনকে ছুরিকাঘাত করে মুন্না এবং জিসানকে সাগর। হত্যাকাণ্ডে মূল আসামি মুন্নাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক।

গত রোববার নগরীর পাহাড়তলী থানার মধ্যম সরাইপাড়া এলাকায় ছুরিকাঘাতে মো. হোসেন মান্না নামে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্যের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে স্থানীয় ইউনিট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিহত হোসেন মান্নাকে ছুরিকাঘাত করতে দেখা যায়।

ঘটনার দুইদিন পর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে মূল আসামি জসিম ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। এই দুজন চট্টগ্রাম-১০ আসনে সদ্যনির্বাচিত সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭