এডিটর’স মাইন্ড

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 18/09/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ দেখতে চায় বিএনপি। আর এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং এক রকমের প্রচ্ছন্ন চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো চাপ নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংহত থাকুক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হোক। কারণ গণতন্ত্র হলো উন্নয়ন এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। আর সে কারণেই তারা বাংলাদেশে একটি অর্থবহ ও অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।

কিন্তু এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রধান বাধা হলো- আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, দুটি রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী অবস্থান। বিএনপি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই দাবিতে তারা এক দফা আন্দোলন করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নাই। সংবিধান সম্মতভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। বিএনপি মনে করছে,দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে ভোট অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হবে না। এখন এরকম একটি অচল অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আর এই সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুইটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এবং দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কাজ করছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেবে না এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাও গ্রহণ করবে না। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সংলাপ এবং সমঝোতাকে সমর্থন করে। তবে মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মহলের সঙ্গে একটি অর্থবহ নির্বাচন কিভাবে করা যায়- তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। আর এই সমস্ত আলাপ-আলোচনায় বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক নিয়েও তারা কথাবার্তা বলছেন। 

সুশীল সমাজের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিকরা একাধিক বৈঠক করেছেন। সংবিধান কাঠামোর মধ্যে কিভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়- সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। বিএনপির সঙ্গেও তারা রাজনৈতিক সমঝোতার পথ নিয়ে কথা বলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও ‘আওমীলীগ কতটুকু পর্যন্ত ছাড় দেবে’-তা নিয়েও কথা বলছে। এই সবকিছু মিলিয়ে তারা একটি অর্থবহ নির্বাচনের পথ খুঁজছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের প্রধান দাবি হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন শেখ হাসিনা- এই দাবি থেকে তারা সরে আসবে না। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক বা যেটাই হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী করলেও কোনো আপত্তি নেই। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা যায় কিনা, সেই সম্ভব্যতা যাচাই করছেন- এ নিয়ে সুশীল সমাজের অন্তত দুইজন প্রতিনিধি মার্কিন দূতাবাসের সাথে কথাও বলেছেন বলে জানা গেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি দশ সদস্যের নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর কথা বলেছেন, যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে একদম নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা থাকবেন; যারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেবেন এবং এই পরামর্শের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন পরিচালনা করবেন। 

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রয়েছে। উপদেষ্টারা কার্যত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে পারবে না। তাই এই প্রস্তাবে তারা রাজি নয়। 

সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজের কয়েকজন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা, তার সাংবিধানিক বিধি-বিধানগুলো খুঁজে দেখছে। তবে বিএনপির এটিতেও সায় নাই। বিএনপি মনে করে, বর্তমান রাষ্ট্রপতিও নিরপেক্ষ নয়। 

আর এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বলছে, তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) নির্বাচনের পুরো বিষয়টি তদারকি করবে এবং নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি, জালিয়াতি ইত্যাদি হলে সেটি তারা প্রতিহত করবে। আর এরকম ঘটনা ঘটলে নির্বাচনকেও স্বীকৃতি দেবে না। 

এরকম একটি প্রস্তাবনা নিয়ে তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) বিএনপিকে নির্বাচনে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। এখন দেখার বিষয়, এই প্রস্তাবে বিএনপি সায় দেয় কিনা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭