ইনসাইড পলিটিক্স

যেসব কারণে ঢাকা নিয়ে আতঙ্কে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 20/09/2023


Thumbnail

সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান বিষয় হলো ঢাকা দখল। ঢাকাকে যদি দখল করা যায় তাহলেই আন্দোলনে বিজয়ী হওয়া যায়। শুধু আন্দোলন না, নির্বাচনেও ঢাকার অধিকাংশ আসনে যারা জয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে এমন একটি চল বহুদিন আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে। 

২০১৩ সাল থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল হয়নি। কারণ ঢাকা সুরক্ষিত ছিল। ঢাকায় কোন বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠতে উঠতে পারেনি। আর ঢাকায় বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এবং আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক শক্তি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা সব সময় মাঠে ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ঢাকা এখন সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি নানা কারণেই দুর্বল। আর এর প্রধান কারণগুলো অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মূলত ৫ টি কারণে ঢাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ আতঙ্কে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. মহানগর কমিটি না হওয়া: সম্মেলন হওয়ার দীর্ঘদিনের পরেও ঢাকা মহানগরের উত্তর এবং দক্ষিণের কমিটিগুলো এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ঢাকা উত্তরের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফারুক খানকে এবং দক্ষিণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কমিটি ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাছাড়া এখানে চলছে নানা রকম সংকট, অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণের একজন নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কমিটি না থাকার কারণে এবং সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধের কারণে উত্তর ও দক্ষিণ দুটো জায়গাতেই কর্মীরা হতদম হয়ে পড়েছেন। তারা কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ দিয়ে দিচ্ছেন না। 

২. এমপিদের নিষ্ক্রিয়তা: ঢাকার মহানগরীতে যে সমস্ত এমপি রয়েছেন তাদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগে রয়েছেন তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় ছাড়া কেউই সক্রিয় নন। আর আওয়ামী লীগের বাইরে যারা আছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ঢাকা মহানগরীতে মোট ১৪ টি নির্বাচনী আসন রয়েছে। এই ১৪ টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সক্রিয় এমপির সংখ্যা খুবই কম। ঢাকা-৪ আসনে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবুল হোসেন। তার  নিষ্ক্রিয়তা আওয়ামী লীগের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে কাজী মনিরুল ইসলাম কিছুটা সক্রিয় থাকলেও তার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ। তিনি এক রকম নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। ঢাকা-৭ আসনে হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে কিছুটা সক্রিয় দেখা যায়। ঢাকা-৮ আসনে রাশেদ খান মেনুনকে জনবিচ্ছিন্ন মনে করা হচ্ছে। ঢাকা-৯ এ সাবের হোসেন চৌধুরী সক্রিয় হলেও ঢাকা-১০ এ এমপি একেবারেই নিষ্ক্রিয়। যেমন নিষ্ক্রিয় ঢাক-১১ আসনের এমপি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১২ থেকে কর্মীদের চাঞ্চল্য এবং স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা গেলেও ঢাকা-১৩ আসনটি বিভক্ত। ঢাকা-১৪ আসনে যিনি এমপি হয়েছেন তিনি এক রকম নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। এভাবে প্রতিটি আসন ওয়ারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এমপিরা বিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

৩. সম্রাট ফ্যাক্টর: আওয়ামী লীগের ২০০৯ এরপর থেকে ঢাকা মহানগরীতে যেকোনো সভা-সমাবেশ সফল করার ক্ষেত্রে  যুবলীগ বিশেষ করে সম্রাটের একটা আলাদা ভূমিকা ছিল। কিন্তু এখন সম্রাট নিষ্ক্রিয় থাকায় যুবলীগের কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে এবং কর্মীদের যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজপথে নেমে আসা নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় আতঙ্কের কারণ।

৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সহ সহ নানা কারণে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের মতো সরকারের পক্ষে সবকিছু উজাড় করে দেবে না এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণও করবে না বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের নেতারা।

৫. বিএনপির সক্রিয়তা: বিএনপি এখন অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা মহানগরীতে সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এটির একটি প্রভাব পড়তে পারে আন্দোলনের ওপর। আর এই কারণেই ঢাকা নিয়েই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭