ইনসাইড বাংলাদেশ

খালেদার জেলে, লাভ শুধু ফখরুলের?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/03/2018


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রশি টানাটানি এখনো অমীমাংশিত। তাই অত্যন্ত সংগত কারণেই বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার ৩৫ দিন পর প্রশ্ন উঠেছে, বেগম জিয়ার কারাজীবনে কার লাভ, কার ক্ষতি?

বেগম জিয়া কারান্তরীণ হবার পর, তাঁর যে কোনো লাভ হয়নি, তাতো পরিষ্কার। মানুষের ব্যস্ত জীবনে, তিনি শুধু অবসর। সংবাদপত্র আর টেলিভিশন দেখার সময় মনে পড়ার বিষয়। তবে ক্রিকেট ম্যাচ, নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়েই যান। গ্রেপ্তার হবার পর দলে তাঁর অপরিহার্যতাও প্রমাণিত হয়নি। বরং বেগম খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপি আরও বেশি ছন্দময়, কার্যকর।

বেগম জিয়া গ্রেপ্তারে সরকারেরও তেমন লাভ হয়নি। বরং আইনি লড়াইয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও ‘সরকারের নিষ্ঠুর আচরণে’ অনেকে বেদনার্ত। কেউ কেউ বলছেন, কত টাকা চুরি হচ্ছে আর দুই কোটি টাকার জন্য বেগম জিয়ার জেল হাস্যকর। তাই বেগম জিয়ার গ্রেপ্তারের কোনো রকম না থাকা সত্বেও সমালোচনার তীর সরকারের দিকে। সরকারের সেই হিসেবে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।

সরকারের যেমন লাভ হয়নি, তেমনি লাভ হয়নি আওয়ামী লীগেরও। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর আওয়ামী লীগের মধ্যে গা ছেড়ে দেওয়া ভাব এসেছে। প্রতিটি এলাকায় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি ছেড়ে অনেকেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। তাই বেগম জিয়া গ্রেপ্তারে আওয়ামী লীগেরও লাভ হয়নি। বরং ক্ষতিই বেশি হয়েছে।

অন্যদিকে বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর, বেশ কিছু কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিএনপি সংগঠিত হচ্ছে। তাতে আপাত দৃষ্টিতে বিএনপির লাভ হয়েছে। তবে নিষ্প্রাণ আন্দোলন আর নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে তৃণমূলে হতাশা বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় অনেকেই বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যাওয়ার কথা বার্তাও শুরু করে দিয়েছেন। তাই আপাত লাভ হলেও বেগম জিয়ার কারাজীবন দীর্ঘস্থায়ী হলে বিএনপি ভাঙ্গতে সময় লাগবে না একদমই।

বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক জিয়া। তিনি লন্ডনে পলাতক। ধারণা করা হয়েছিল, তারেক তাঁর মায়ের জন্য হলেও নেতৃত্বের এক নতুন মাত্রায় নিজেকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তারের পর তারেক প্রমাণ করেছেন, নেতা হবার কোনো যোগ্যতাই তাঁর নেই। কাজেই বেগম জিয়ার প্রেপ্তারে তারেক জিয়াও লাভবান হয়নি। বরং কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়ে তারেক আগামীর নেতা হবার সম্ভাবনাকেও হত্যা করেছে।

বেগম জিয়ার গ্রেপ্তারে লাভ হয়েছে একজনের। তিনি হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির একজন তৃণমূল নেতা বলছিলেন, ‘ফখরুল ভাই আগে বসতেন ভাঙ্গা চেয়ারে, এখন বসেন সভাপতির সিংহাসনে।’ শুধু সিংহাসনে বসা নিয়ে নয়, দলের সিনিয়র নেতারাও তাঁকে মেনে নিয়েছেন। দলে ক্রমশই তিনি অবিসংবিদিত নেতায় রূপান্তরিত হচ্ছেন। বিএনপির মতো দলে মহাসচিব মানে হলো, দলের চেয়ারপারসনের কেরানি। বিএনপির ইতিহাসে এর আগে মাত্র দুজন অত্যন্ত মর্যাদায় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। এদের একজন ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর কে এম ওবায়দুর রহমান। অন্যকেউ এমনকি ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার বা মান্নান ভূঁইয়াও আলাদা আলো ছড়াতে পারেনি। সেদিন থেকে ভাগ্যবান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপিতে আলো ছড়ানোর বিপদ অনেক। যারাই নেতা হিসেবে আলাদা ঐতিহ্য ও মর্যাদা তৈরি করেছেন, দল থেকে তাঁদেরই সরে যেতে হয়েছে, কে এম ওবায়দুর রহমান, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, আবদুল মান্নান ভুঁইয়া এরকম অনেক নামই আছে। মির্জা ফখরুলের পরিণতি কি এদের মতো হবে? নাকি তিনিই হবেন বিএনপির ত্রাতা। তিনি যাই হন, বেগম জিয়ার গ্রেপ্তারে এখন পর্যন্ত তাঁর লাভের পাল্লাই সবচেয়ে ভারী।




Read In English: http://bit.ly/2FGGshG


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭