ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক জিয়া বিরোধী প্লাটফর্ম হচ্ছে তৃণমূল বিএনপি?


প্রকাশ: 21/09/2023


Thumbnail

শমসের মবিন চৌধুরী, জাঁদরেল কূটনীতিক পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে তখন তিনি বিএনপির অন্যতম থিংক ট্যাংক হিসাবে পরিচিতি পান। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল সর্বজন বিদিত। কিন্তু তারেক জিয়া যখন বিএনপির কর্তৃত্ব নিতে শুরু করেন, তখন আস্তে আস্তে শমসের মবিন চৌধুরী নিজেকে বিএনপি থেকে গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেন।

এর কারণ হলো তারেক জিয়ার দুর্ব্যবহার, শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং কোন কিছু না জেনেই পণ্ডিতি করা। একজন সিজন ডিপ্লোম্যাট এই ধরনের অর্বাচীন বালকের অর্ধ শিক্ষিত ও কথাবার্তা পছন্দ করতে পারেননি। আর এই কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপি ছেড়ে চলে যান। এখন তিনি তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

বিএনপির আরেক পোড় খাওয়া ত্যাগী নেতা তৈমুল আলম খন্দকার। তিনি ছিলেন মাঠের রাজনীতিবিদ। রাজনীতির মাধ্যমেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি নির্যাতিত হন, কারাবরণ করেন দীর্ঘদিন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তিনি একটি বড় ফ্যাক্টর। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন যে এটির সাথে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতির প্রয়োজনে তাকে নির্বাচন করতে হচ্ছে। কিন্তু লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া তার কোন কথাই শোনেননি। বরং নির্বাচন করার অপরাধে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। সেই সময় তারেক জিয়া তার সঙ্গে খুবই নিম্নমানের আচরণ করেছেন। আজেবাজে কথা বলেছেন। একজন প্রবীণ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ একজন বালকের এই সমস্ত কথাবার্তায় আহত হয়েছেন, মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। একারণেই তিনি এখন বিএনপি ছেড়ে নতুন ঠিকানা খুঁজে নিলেন।

বিএনপিতে এরকম বহু নেতা আছে যারা তারেকের দুর্ব্যবহার, অত্যাচার গালাগালের কারণে বিএনপি ত্যাগ করেছেন। খুলনার বিএনপি নেতা এবং সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী তাদের মধ্যে অন্যতম। এখনো বিএনপিতে অনেক নেতা আছেন যারা নিষ্ক্রিয় শুধুমাত্র তারেক জিয়ার বেয়াদবি এবং অধঃত্বপূর্ণ কথাবার্তার জন্য।

খুলনার নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চট্টগ্রামের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান কিংবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনরা তারেক জিয়ার অপমানের গ্লানি সইতে না পেরে নিজেরাই একা একা নীরবে নিভৃতে আর্তনাদ করেন। এরকম নেতার সংখ্যা বিএনপিতে কম নয়।

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন যে, তারেক জিয়া যে ভাষায় কথা বলেন তা চাকর বাকরদের সাথেও আমরা বলি না। তার মুখের ভাষা এত গর্হিত এবং অরুচিকর যে তা প্রকাশ্যে বলা যায় না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, তিনি রাজনীতি না বুঝেই পাণ্ডিত্ব করেন, সব বুঝে ফেলার ভান করেন। এটি একজন রাজনীতিবিদের জন্য ভয়ংকর প্রবণতা বলেও মনে করেন বিএনপির ওই নেতা। আর এ সমস্ত কারণেই বিএনপি থেকে বেরিয়ে গেছেন অনেক নেতা।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কথায় ধরা যাক। এই অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা, প্রথম মহাসচিব। জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার সাথে যে আচরণ তারেক জিয়া করেছে, সেই কারণেই নিজের হাতে গড়া সংগঠন ছেড়ে তিনি চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

একই রকম অবস্থা কর্নেল অলি আহমেদের। জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি তারেকের অত্যাচারেই (এলডিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। আর এখন তৃণমূল বিএনপি গঠিত হওয়ার পর যারা তারেক জিয়ার অসদাচরণ এবং বাজে ব্যবহারের কারণে ক্ষুব্ধ তারা যেন নতুন ঠিকানা পাচ্ছেন।

এখনো তারেক জিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক দল পরিচালনায় কোনঠাসা হয়ে আছেন অনেকেই। অনেকেই বিকল্পের সন্ধানে। তাদের জন্য বিকল্প ঠিকানা হল তৃণমূল বিএনপি।

ধারণা করা হচ্ছে যে শুধুমাত্র বিএনপিতেই কোণঠাসা বা তারেকের উপর বিরক্ত ব্যক্তিরা নন, অনেক নেতারাই যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আছেন যেমন। এডিপি, বিকল্প ধারাসহ একাধিক রাজনৈতিক দল, বিএনপি থেকে লোকজন যেয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলো গঠিত হয়েছিল সেই রাজনৈতিক দলগুলো তৃণমূল বিএনপিতে আসতে পারে। বিএনপির আসল প্ল্যাটফর্ম হতে পারে এই রাজনৈতিক দলটি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭