ইনসাইড থট

ভিসা নীতি নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হোক সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ


প্রকাশ: 23/09/2023


Thumbnail

পৃথিবী ব্যাপী খাদ্য, জ্বালানী ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম উর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ জন্য খাদ্যসামগ্রীর মূল্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বেড়েছে রেকর্ড হারে। বাংলাদেশ ও তার বাইরে নয়। খাদ্য, জ্বালানী ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের বেশিরভাগ মানুষ তাই কষ্টে আছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও অর্জন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তিন মেয়াদের চৌদ্দ বছর নয় মাসে। বাংলাদেশের জন্মের প্রথম সাঁইত্রিশ বছরে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের চার গুণের বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের টানা তিন মেয়াদে। কৃষিতে উৎপাদন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে মোট এবং আনুপাতিক উভয় ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে সারাদেশে যে পরিমাণ স্কুল, কলেজ সরকারীকরণ করা হয়েছে তা ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর প্রথম আট মেয়াদের সরকারের আমলেও করা হয়নি। এ যাবৎকালে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার তুলনায় আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন মানুষের সামনে দৃশ্যমান। 

পদ্মা সেতু সহ অসংখ্য বড় বড় সেতু, রেল সেতু, ফ্লাইওভার, ফোর লেন, সিক্স লেন সড়ক, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা বন্দর, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পাবনার রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট সহ বাংলাদেশের প্রায় সব মেগা প্রজেক্ট এই সরকারের আমলে গ্রহণ এবং সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের এই বিপুল উন্নয়ন চরম আওয়ামী লীগ বিরোধী, দেশবিরোধী এবং কিছু ধর্মান্ধ ছাড়া এক বাক্যে সবাই স্বীকার করেন। তথ্য ও যোগাযোগ এবং প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের সুফল প্রায় সকলেই ভোগ করছে। সরকারের প্রায় সকল সেবাখাতে ডিজিটালাইজেশনের কারণে দূর্নীতি, অনিয়ম এবং  হয়রানি অনেকাংশে কমেছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি কমেছে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায়। দু-একটি বিচ্যুতি ছাড়া দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত একশো বছরে পৃথিবীর সবচাইতে বড় দূর্যোগের নাম "করোনা" মহামারী। ২০২০-২০২২ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত টানা প্রায় আড়াই বছর পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়েছিল। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল সর্বত্র। এত বড় মহামারি সরকার সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। অতি নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ কিছুটা কষ্টে থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ শান্তিতে এবং স্বস্তিতে ছিল। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষকে সরকার মানবিক সহায়তার আওতায় খাদ্য, অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করায় করোনাকালীন চরম দুঃসময়েও কেউ না খেয়ে থাকে নি।

করোনা পরবর্তীতে মানুষ যখন আবার ঘুরে দাঁড়াবে ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারনে পৃথিবী ব্যাপী সৃষ্ট পরিস্থিতি তাতে বাধ সেধেছে। চলতি বছরে নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরা অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে আছেন। করোনা মহামারীতে অনেক এনজিও কর্মি, প্রাইভেট ফার্মের কর্মচারী এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান মালিকগণ তাদের কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন। ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসায় মন্দার কারণে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এদের অনেকেই এখনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। এদের কেউ কেউ ভাল থাকলেও অনেকেই খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। ফলে তারা খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। অনেকেই করোনাকালীন সময়ে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় পূর্বের সঞ্চিত অর্থ খরচ করে এখন কিছুটা চাপে আছেন। 

টানা প্রায় আড়াই বছর করোনার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। সারা বিশ্বেই দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে যোগ হয়েছে আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের  কারসাজি। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজার পরিস্থিতিকে সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয় করে তুলেছে। আমিষের প্রধান চারটি উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ডালের দাম চড়া। চাল এবং ভোজ্য তেলের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও জিরা, মসলা এবং চিনির দাম আকাশচুম্বী। মাঝেমধ্যে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে হঠাৎ করেই কোনো কোনো পণ্যমূল্য এক লাফে দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়ে যায়। বাজারের উপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক সময়ে কখনো কাঁচা মরিচ, কখনো আদা, কখনো বা চিনি, জিরা, পেয়াজ কিংবা ডিমের বাজার হঠাৎ করেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। অস্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের তৎপরতা মানুষকে খুশি করতে পারেনি। মানুষ মনে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যর্থ। 

পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি, অসাধু ব্যবসায়ীদের অদৃশ্য সিন্ডিকেট এবং সিন্ডিকেটের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রীর অসহায় আত্মসমর্পণ মানুষ কে হতাশ করেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া সীমিত আয়ের মানুষকে তাই সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন এবং অর্জন সন্তুষ্ট রাখতে পারছে না। মানুষের মধ্যে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন এবং অর্জনের যে আলোচনা তা ক্রমাগত গ্রাস করছে দ্রব্যমূল্যের নেতিবাচক আলোচনা। দ্রব্যমূল্য যেন উন্নয়ন, অর্জনের বিষফোঁড়া। সরকারের এমপি, মন্ত্রী এবং সরকারি দলের অনেক নেতাও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কষ্টের ব্যাপারটি অনুধাবণ করতে পারছেন বলেই নেতাদের অনেকের বক্তব্য বিবৃতিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে কোনো ব্যবস্থায় খুব একটা কাজে না আসায় তারাও বাণিজ্য মন্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ। 

সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার যোগ্যতা, সততা, দেশপ্রেম এবং আন্তরিকতা নিয়ে সিংহভাগ মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন নেই। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার কোনো যোগ্য বিকল্প এই মূহুর্তে সরকারি দল কিংবা সরকার বিরোধী কোনো দলেই নেই। শেখ হাসিনা তার তিন মেয়াদে  বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বারবার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণে মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের উপর বারবার আস্থা রেখেছেন। মানুষ বিশ্বাস করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও প্রধানমন্ত্রী সফল হবেন। বাণিজ্য মন্ত্রীর উপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। মানুষ বিশ্বাস করে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর মনিটরিং এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে তার সরাসরি হস্তক্ষেপই বাজার পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র সমাধান। পণ্যের মজুদ এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও মাঝেমাঝে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে সৃষ্ট অরাজকতা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের প্রতি মানুষের অসন্তোষ বাড়তে পারে। নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই উন্নয়ন, অর্জনের বিষফোঁড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগের ৯৯% নেতাকর্মী, সমর্থক এবং ভোটারের পাসপোর্ট- ই নেই। সুতরাং ভিসা নীতি এবং স্যাংশনে তারা ভীত নয়। ভিসা নীতি কিংবা স্যাংশন নয় আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সফল হলে স্যাংশন এবং বিদেশী চাপ মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া শেখ হাসিনার জন্য সহজ হবে। মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিবে ইনশাআল্লাহ্!

লেখকঃ- মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা, খুলনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭