ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কি চায়


প্রকাশ: 24/09/2023


Thumbnail

বাংলাদেশে কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গত ২৪ মে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তার প্রয়োগ শুরু হলো। 

এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক এবং আলোচনা। সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আসলে কি চায়? তারা কি আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়? তারা কি বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে আনতে চায়? নাকি এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আড়ালে তাদের কোনো স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়? এই প্রশ্নগুলো এখন বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এর উত্তর খোঁজা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ এখন অনেক বেশি। মূলত বাংলাদেশে পাঁচটি বিষয় তারা প্রকাশ্যে দেখতে চায়। আর কিছু স্বার্থ তাদের রয়েছে যেটি তারা প্রকাশ করছে না। প্রকাশ্য যে বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে দেখতে চায় তার মধ্যে রয়েছে:

১. বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অর্থ হল প্রধান প্রধান সকল রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এরকম নির্বাচন না হলে সে নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে তা এখন স্পষ্ট। নতুন করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরে আসবে না। 

২. মানবাধিকার সুরক্ষা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে মানবাধিকার ইস্যুটিকে সম্পৃক্ত করেছে। মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সক্রিয় এবং স্পষ্ট করতে চায়। বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক হয়রানি, মিথ্যা মামলাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার এবং সমাধান চায়।

৩. ড. ইউনূসের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় যে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হচ্ছে সে কার্যক্রমগুলো বন্ধ হোক। বরং একটি নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে ড. ইউনূসের বিষয়টিকে সমাধান করা হোক।

৪. গুমের নিরপেক্ষ তদন্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, বাংলাদেশের যে গুমের ঘটনাগুলো ঘটছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। বিশেষ করে জাতিসংঘ যে ৭০টি গুমের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আপত্তি ধরে রেখেছে, সেই ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটির পৃথক পৃথকভাবে নির্মোহ নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তার কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য চায়।

৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায় এবং এই লক্ষ্যে প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইনের বাতিল চায়। 

এই ৫টি বিষয়ই মূলত বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য চাওয়া। কিন্তু এর আড়ালে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায় কি সেটি নিয়েও নানামুখী আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে ঘিরে কয়েকটি সুস্পষ্ট স্বার্থ রয়েছে। আর এই স্বার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. চীনের সঙ্গে দূরত্ব: বাংলাদেশ-চীনের সঙ্গে যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করেছে সেটির লাগাম টেনে ধরতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে বাংলাদেশ চীনের আধিপত্যের শেকলে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বের করার জন্য চাপ প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।

২. বাংলাদেশে সামরিক স্থাপনা তৈরি: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সামরিক স্থাপনা তৈরি করতে চায়। যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায়। কারণ সেন্টমার্টিনকে ঘিরে তাদের সামরিক পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম আকাঙ্ক্ষার জায়গা।

৩. সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্য ক্ষুন্ন করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। আর এই একক আধিপত্য অবস্থান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেখানে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে। তা না হলে সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্য মার্কিন স্বার্থের জন্য হুমকি বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে।

৪. মার্কিন অনুগতদের ক্ষমতার কেন্দ্রে আনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, সুশীল সমাজের যে সমস্ত প্রতিনিধিরা রয়েছেন যারা বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করে তারা নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এই অবস্থার অবসান চায় যুক্তরাষ্ট্র। তারা সুশীল সমাজসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুগত ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রে আরও সক্রিয় দেখতে চায়। 

এই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ চাওয়ার ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নানা রকম বিধি-নিষেধ প্রয়োগ করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থগুলো উদ্ধারের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধগুলো প্রয়োগ করছে তাতে তারা সফল হয় কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭