ইনসাইড পলিটিক্স

যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 24/09/2023


Thumbnail

মার্কিন ভিসানীতির পর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নানামুখী আলাপ আলোচনা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তাদের কাছে সুস্পষ্ট হচ্ছে। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের নেতারা যাই বলুক না কেন তারা প্রকারান্তে এটা স্বীকার করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে একটি আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে এবং নির্বাচনের আগে নানা রকম চাপ প্রয়োগ করবে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

যদিও আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এই ভিসানীতিকে একটা রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে এর ফলে বিএনপি চাপে পড়বে—এমন উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব খুব স্পষ্ট এবং এব্যাপারে তাদের অবস্থানের কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি করবে? 

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো প্রকারে নির্বাচনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অটল এবং অনড় অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সংবিধানকে সমন্বিত রাখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলছেন যে, আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারিত হবে। তবে তার আগেই আওয়ামী লীগ একটি রূপকল্পের খসড়া তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করেই এই রূপপ্রকল্পের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যার মূল বিষয় হলো যেকোনো প্রকারে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আওয়ামী লীগ মার্কিন ভিসানীতির পর নির্বাচনের ব্যাপারে আরও বদ্ধপরিকর এবং কৌশলী ভূমিকা নেবে বলেই বিভিন্ন নেতারা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যে কৌশলে এগুতে চায় তার মধ্যে তার মধ্যে রয়েছে:

১. নির্বাচনের প্রশ্নে অটল থাকা: আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সেটি নিশ্চিত করা আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের সাথে মিলিয়ে কাজ করবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল যেন ঘোষণা করা হয় সেটি আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করতে চায়।

২. বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসা: আগামী নির্বাচন যেন উৎসবমুখর অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। আশার কথা যে, তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয়েছে এবং আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার জন্য আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে। আর এই কর্মকাণ্ড সফল হলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আবহাওয়া তৈরি হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

৩. ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো: আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই বলুক যে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলেই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব, কিন্তু বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায়। যে নির্বাচনে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এরকম ভোটার ভোট দিলে এই নির্বাচনকে নিয়ে নতুন কোনো প্রশ্ন উঠবে না। 

৪. বিরোধী আন্দোলনকে কৌশলে দমন করা: আওয়ামী লীগ মনে করছে যে এই নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি একটা বিশৃঙ্খলা এবং অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করবে। তারা নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হলো জনসমাবেশ, জনসংযোগ এবং জনসম্প্রীতির মাধ্যমে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করা এবং নির্বাচনের জন্য যারা বাধাগ্রস্ত হবে তাদের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অভিযোগ উত্থাপন করা। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নুতন করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ বা অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হবে বলে আওয়ামী লীগের ধারণা।

৫. নিরপেক্ষ নির্বাচন করা: আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানানো হয়েছে যে নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। এখানে কোনো ভাবে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষপাত হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছু আওয়ামী লীগ করবে। মোদ্দা কথা হলো ভিসা নিষেধাজ্ঞার শর্তে আওয়ামী লীগ একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়। যে নির্বাচনটি হবে অখন্ড বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭