মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা অবাদ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে এরকম কয়েকজনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাদের ভিসা বাতিল করেছে সে সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ না করলেও এ ধরনের তথ্য সরকারের কাছে আছে বলেই সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরও এধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এরকম আশঙ্কা থেকে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আছে বা তাদের সন্তান-সন্ততি বা পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কোন ধরনের বৈষয়িক সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে এমন কোন দায়িত্বে রাখবে না। এই সমস্ত দায়িত্বে যদি এখন কেউ থেকে থাকে তাদের সেখান থেকে গুটিয়ে নেওয়া হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসনের মধ্যে যারাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে গুটিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
সরকার মনে করছে যে, নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে মাঠ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে ফেলতে চাইবে এবং একটি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইবে। এটি যেন না করতে পারে সেই জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং মাঠ প্রশাসনের মধ্যে যাচাই বাছাই শুরু হয়েছে।
মূলত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য গুলো যে সমস্ত কর্মকর্তার মধ্যে থাকবে তাদেরকে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো দায়িত্বে রাখা হবে না। যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;
১. মার্কিন ভিসা রয়েছে।
২. পরিবারের কোনো সদস্য বা সন্তান-সন্ততি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে।
৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নিকট ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন থাকে এবং ওই ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত যাতায়াত করেন।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ রয়েছে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন সরকারি কর্মকর্তারা।
৫. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী আ আবেদন করেছেন এরকম ব্যক্তিবর্গরা।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এরকম কর্মকর্তার সংখ্যা এক থেকে দুই শতাংশের বেশি না। এর বাইরে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কখনোই যান না বা যাওয়ার প্রয়োজনও মনে করেন না। সরকার তার নিজস্ব উদ্যোগে জনপ্রশাসনের মাধ্যমে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, মাত্র এক থেকে মাত্র দুই শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা তাদের চাকরি জীবনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান বা সেখানে তাদের সন্তান-সন্ততিরা পড়াশোনা করেন। এখন যারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পালন করছেন তাদের মধ্যে যাদের সন্তান-সন্ততিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে বা যারা নিয়মিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করেন তাদের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে এরকম ব্যক্তিরা নির্বাচনকালীন সময়ে একটু দূরত্বে থাকবেন। এমন সব ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনকালীন সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা হবে যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই।