ইনসাইড বাংলাদেশ

ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আতঙ্কে ব্যবসায়িক, আমলা এবং পুলিশ


প্রকাশ: 25/09/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কয়েকজন নাগরিকের ওপর যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ভালোমতোই প্রভাব ফেলেছে। তবে রাজনীতিবিদরা ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আতঙ্কিত নয়। ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে আলোড়িত রাজনৈতিক দল অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই এই ভিসা নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের মধ্যে খুব কমই ভিসা নীতিতে প্রভাবিত হবেন এবং ভিসা নীতি নিয়ে তাদের কোনো রকম গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা হবে—এটি তারা মনে করছেন না। বরং এরকম ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেলে রাজনীতির মাঠে তাদের জনপ্রিয়তা প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়বে এবং ক্ষমতাসীন দলে তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, আমার ওপর যদি ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে তো আমি খুশি হবো। তাহলে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক ধাপ এগিয়ে যাব। রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন তারাও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে ভীত বলে মনে হয় না। তবে তারা স্বীকার করছেন যে, এটির ফলে একটি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সকলকে নিয়ে দেশ পরিচালনা করছিল এখন সেটি বাধাগ্রস্ত হবে। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে অনেকেই দায়িত্ব পালনে ইতস্তত করতে পারে—এমন শঙ্কা আওয়ামী লীগ করছে। এটি ভিসা নীতিতে আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব বলে তারা মনে করছেন। তবে রাজনীতিবিদরা ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আক্রান্ত হলেও এটি নিয়ে তারা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন এবং এটার প্রভাব তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পড়বে বলে তারা মনে করছেন না। কিন্তু এই ভিসা নীতি বাংলাদেশের তিন শ্রেণীর মানুষের ওপর অত্যন্ত ভালোভাবে প্রভাব ফেলেছে। 

২২ সেপ্টেম্বর ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করার পর তিন ধরনের পেশাজীবীদের মধ্যে এই নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা শুধু যে তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে উদ্বিগ্ন তেমনটি নয় বরং তারা মনে করছেন এই ভিসা নীতির সূত্র ধরে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, মার্কিন বাজার যদি বাংলাদেশের জন্য সংকুচিত হয় বা বন্ধ হয় সেটি হবে তাদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই জন্য পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর ভালো মতো উদ্বিগ্ন। এদের মধ্যে আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বসতবাতি করেছেন। তাদের সন্তান-সন্ততিরা সেখানে লেখাপড়া করে। সেখানেও তাদের বিনিয়োগ আছে, সম্পত্তি আছে। এরা আবার দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য নতুন করে আওয়ামী লীগ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও করেছেন। এরকম যারা তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার সংকটে আছেন একাধিক কারণে। প্রথমত এর ফলে তাদের সন্তান-সন্ততি পরিবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারা যে সম্পদ রেখেছেন সেই সম্পদগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে এবং তৃতীয়ত, ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি বন্ধ হতে পারে। 

ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়বে না—এমনটি দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি ব্যক্তিগত ভিসা বাতিল হয়ে যায় তাহলে তার প্রভাব অবশ্যই ব্যবসার মধ্যে পড়বে। তাছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ এর আগেও তিনি যে সমস্ত বক্তব্য দিয়েছেন বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের মতোই আতঙ্কিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রথম ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। 

ধারণা করা হচ্ছে যে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ করা, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা ইত্যাদির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে। এটি তাদের জন্য আতঙ্কের এই কারণে যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রীতি রয়েছে। এদের কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করেছেন। কারো কারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। বেশ কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের সন্তান-সন্ততিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, নিকট জন আত্মীয় স্বজন সেখানে আছেন এবং তাদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন। এই সংখ্যাটা কম না। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একটা বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই আতঙ্কটি পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের প্রশাসনের লোকজনও বেশ আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। কারণ পুলিশ বাহিনীর মতো প্রশাসনের লোকজনেরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আলাদা আকর্ষণ রয়েছেন। প্রশাসনের অনেকে অবসরের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নিচ্ছেন এবং সেখানে তার সন্তান-সন্ততিকে রেখেছেন। অনেকেই গ্রীণ কার্ড নিয়ে সরকারি চাকরি করছেন। 

একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পর্যায় পর্যন্ত এরকম অন্তত ১৪০ জন রয়েছেন যারা গ্রীন কার্ড ধারী অথবা যাদের সন্তান-সন্ততি বা পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে। সেখানে তাদের সম্পদও রয়েছে। এরা এখন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে উদ্বিগ্ন। আর এই তিন শ্রেণীর উদ্বিগ্ন থাকার ফলে এরা আগামী নির্বাচনের আগে কি ভূমিকা রাখবে এবং সরকারকে কতটুকু সহযোগিতা করবে তা নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭