ইনসাইড বাংলাদেশ

মাস্টার্সের আগেই সহকারী জজ নূর, শোনালেন সংগ্রামের গল্প


প্রকাশ: 26/09/2023


Thumbnail

১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এ সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। নূরসহ ইবির সাতজন শিক্ষার্থী সহকারী সহকারী জজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই বিজেএসসি পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন নূর। পরীক্ষায় সারাদেশে উত্তীর্ণ ১০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার অবস্থান ৪০ তম। তার এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে সংগ্রামী জীবনের গল্প।

স্বপ্ন পুরণে অদম্য ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার মৃত মো. নূর বাদশার ছেলে তিনি। ছাত্রজীবনে বাবাকে হারালেও দমে জাননি। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় সফলতার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গেছেন। ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে। নূর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর শুরুর দিকে তেমন পড়াশুনায় মনোযোগী ছিলাম না। করোনার সময় জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। অনিশ্চয়তার জীবনে নিজেকে বদলানোর প্রয়াসে নামাজ এবং পড়াশোনায় মনোযাগী হই।

সহপাঠীদের বই নিয়ে পড়াশুনা করেছেন নূর। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই উপবৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। আমার বইপত্র কেনার সামর্থ ছিলো না। বন্ধু হোসনে মোবারক সাগর এবং মোহাম্মদ নাজ্জাসির বই নিয়ে আমি পড়াশোনা শুরু করি। বিজেএসসির প্রিলি হতে লিখিত পুরোটা সময় আমি তাদের বই পড়েছি। বিষয়টি আমার বন্ধু-সহপাঠী ও কাছের মানুষজন জানে। আর মাথায় বোঝাস্বরূপ চেপে বসা আর্থিক দিকটা নিরসনে ‘সিজেডএম’ এবং ‘পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ’ সংস্থা দুটি খুবই সহযোগিতা করেছে।

একবার পড়াশোনা শুরু করার পর ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন নূর। তিনি জানান, আমি ফজরের নামাজ পড়ে পড়াশুনা শুরু করতাম। যতক্ষণ ক্লান্ত না হতাম ততক্ষণ পড়ার চেষ্টা করতাম। সবসময় চেষ্টা করেছি বুঝে পড়ার জন্য। একটা বিষয় কয়েকবার পড়ার চেষ্টা করেছি। সর্বোপরি মায়ের ইচ্ছে পূরণে নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি। আর আল্লাহ কাছে সাহায্য চেয়েছি। সবার দোয়া আর নিজের প্রচেষ্টার সম্মিলিত প্রয়াস আজকের আমার এই সফলতা।

শিক্ষক ও সিনিয়র ভাইদের থেকে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা পেয়েছেন নূর। তিনি জানান, জুডিশিয়ারীর দিক নির্দেশনায় আমি সবথেকে বেশি সহায়তা পেয়েছি সাকিব আহমেদ ইমন ভাইয়ের কাছ থেকে। যিনি ১৫তম বিজেএসসি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত। আজীবন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। ইমন ভাই আমাকে মানসিকভাবে অনুপ্রাণিত করতো। বলতো, নূর তুমি পারবে। ভাই আমার আপন ভাইয়ের মতো সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া আমার সফলতার পিছনে আমার বিভাগের শিক্ষকরা অনেক ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।

মা সবসময় নূরকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মা ছোট থেকেই আমার প্রতিটা সিদ্ধান্তে সব সময়ই পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। আমার আজকে যা অর্জন তার পুরোটাই আমার মায়ের অর্জন বলে মনে করি। অনেক বছর অপেক্ষায় ছিলাম মাকে একটা সুসংবাদ জানাবো, মায়ের হাসিমাখা মুখটা দেখবো। অনেক দিন মাকে হাসিমুখে দেখিনি। আল্লাহ তায়ালা আমার সেই ফরিয়াদ কবুল করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

প্রয়াত বাবর জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন নূর। তিনি জানান, আজ আমার এই অর্জনে যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি খুশি হতো, সে মানুষটা হচ্ছে আমার বাবা। যিনি গর্ব করে বলতো আমার ছেলে বিচারক হিসেবে মনোনীত হয়েছে, সেই মানুষ টা নেই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ। প্রায়াত বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

আসাদুজ্জামান নূর জানান, আমার সঙ্গে যারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের থেকে আমি কখনও বেশি জানি না বা বেশি পারদর্শী ছিলাম না। উপর থেকে যিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই ভালো জানেন কখন কাকে কোথায় নিতে হবে। তার উপরেই সবর্দা ভরসা করে চলি, তিনিই আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যে মহান দায়িত্বের যোগ্য বলে আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে মনোনীত করেছেন, সেই দায়িত্ব যেন আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭