ইনসাইড পলিটিক্স

ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর আওয়ামী লীগ-বিএনপির কৌশল পরিবর্তন


প্রকাশ: 26/09/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এখন কৌশলের রাজনীতি করছে। বিএনপি চাইছে সরকারকে চাপে ফেলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে বা এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যেখানে সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানটাই হলো তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ যেকোনো উপায়ে একটি অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানে বেঁধে দেওয়ার সময় সূচির মধ্যে করতে চায়। কিন্তু এই দুই দলের কৌশলে এখন সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়িয়েছে মার্কিন ভিসা নীতি। 

ইতিমধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর এই নতুন ভিসা নীতির আওতায় কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে এ নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিও আন্দোলনের কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করেছে। যদিও দুই দলই প্রকাশ্যে বলছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

আওয়ামী লীগ যে কৌশলগুলো পরিবর্তন করেছে 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন ভিসা নীতিকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ যাই বলুক না কেন, আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন এই ভিসা নীতি সুস্পষ্টভাবে সরকারকে চাপে ফেলার একটি কৌশল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং নির্বাচন যেন বাধাগ্রস্ত হয় সেই লক্ষ্যেই এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা বলে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই মনে করেন। আর এই কারণে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক কৌশলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এই সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে-

১. আওয়ামী লীগ সরাসরি ভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলবে না: আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা যেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো বক্তব্য বিবৃতি না দেয়। বরং তারা যেন নির্বাচন প্রশ্নটাকে সামনে রেখে নিয়ে আসে এবং এই ভিসা নীতিকে গায়ে না মাখে। 

২. নির্বাচনমুখী রাজনীতি: আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনমুখী রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ভিসা নীতিকে এড়িয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে একটি আবহ তোলার জন্য বক্তব্য রাখছে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির মূল বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনকে যারা বাধা দেবে তাদেরকে ভিসা নীতির আওতায় আনা হবে সেই জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রাখে।

৩. বিএনপিকে প্রতিহত করা, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না ইত্যাদি বক্তব্য না রাখা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না বা বিএনপিকে প্রতিহত করা হবে এ ধরনের কোনো বক্তব্য তারা যেন না দেয়।

৪. মানবাধিকার বিরোধী কোনো বক্তব্য না রাখা: আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই যেন মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয় বা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যায় এই ধরনের বক্তব্য পরিহার করে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

৫. আক্রমণাত্মক বক্তব্য এড়িয়ে চলা: আওয়ামী লীগের নেতারা যেন আক্রমণাত্মক বক্তব্য মেরে দেওয়া হবে, বের করে দেওয়া হবে, কোথাও ঢুকতে দেওয়া হবে না এই জাতীয় বক্তব্য যেন না দেয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

বিএনপির কৌশল পরিবর্তন

বিএনপিও তার কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করেছে। বিএনপি কদিন আগেও বলছিল, তারা নির্বাচন প্রতিহত করবে, নির্বাচন বর্জন করবে। সেই অবস্থান থেকে কৌশলগত কারণে এখন বিএনপি সরে এসেছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কারণেই এখন বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের পক্ষে কথা বলতে হচ্ছে। তাদের বক্তব্য এবং প্রচারণায় বলতে চাইছে যে, বিএনপি নির্বাচন করতে চায় কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনবিরোধী নয়, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যে নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। তেমন নির্বাচনের জন্য সরকারই প্রধান অন্তরায়। তারা বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রধান বাধা হলো বর্তমান সরকার। এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে সম্ভব নয়। এই বক্তব্যটিকে তারা প্রধান করে সামনে নিয়ে আসছে। এখন দেখার বিষয় এই কৌশলের খেলায় শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭