ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

এবার তারেককে নিয়ে বিএনপির ওপর মার্কিন চাপ


প্রকাশ: 27/09/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। সেই ভিসা নীতি আওতায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের উল্লাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগ চাপে পড়ে গেছে। আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে না। কিন্তু এর মধ্যেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একটি ঘটনা বিএনপির মধ্যে তোলপাড় তৈরি করেছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ব্যাপারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তীব্র অনীহা এবং অনাস্থা জানিয়েছে এবং তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ তৈরি করেছে। উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ২০০৭ সাল থেকেই আছেন তারেক জিয়া। তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তারেক জিয়াকে একজন ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত এবং এবং সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেন। 

উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় যখন তারেক জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় তারপর তৎকালীন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন বেগম খালেদা জিয়া। যে কোনো মূল্যে তিনি তার পুত্রকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। এই সময় বেগম খালেদা জিয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এবং মইন ইউ আহমেদ এর সরকারকে বলেছিলেন যে, তারেক জিয়া ভবিষ্যতে আর রাজনীতি করবে না এবং সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবে। এই শর্তে ২০০৭ সালের শেষ দিকে তারেক জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য নীতিগতভাবে সম্মতি দেয় তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার। এই সম্মতি পাওয়ার পর তারেক জিয়া প্রথম পছন্দ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। আর এ কারণেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভিসা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু উইকিলিকস এর ফাঁসকরা তথ্যে দেখা যায় যে, তারেক জিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাস নেতিবাচক মন্তব্য করে এবং তারা বলে যে তারেক জিয়া দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি দুর্নীতিবাজ। এ কারণেই তাকে ভিসা না দেওয়ার সুপারিশ করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তারেককে বিপদজনক হিসেবেও চিহ্নিত করেন।

ঢাকাস্থ দূতাবাসের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তারেক জিয়াকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এর ফলে তারেক জিয়ার আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়নি। তার বদলে তিনি বিকল্প হিসাবে যুক্তরাজ্যে (লন্ডন) যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সপরিবারে সেখানেই যান। এখনো তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন যে তারেক জিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সেই ভিসা নিষেধাজ্ঞাটি এখনো বহাল রয়েছে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তখন বিএনপির অনেকে আশাবাদী হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির জন্য তারেকের মতো ‘দুর্বৃত্তকে’ রাজনীতি থেকে বাদ দিতে হবে। বরং পরিবারতন্ত্র মুক্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত নেতৃত্বের অধীনে বিএনপিকে আন্দোলন করতে হবে এবং নির্বাচন করতে হবে। তারেক জিয়ার নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে না। 

অনেকেই মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে আগামী নির্বাচন এবং বাংলাদেশ নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চলছে সেই সমঝোতার চেষ্টার একটি অংশ হিসেবেই তারেক জিয়াকে মাইনাস করতে চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ লালন, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে যখন ভারত আলোচনা করেছে তখন তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারেক জিয়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা এবং এই ব্যাপারে কোনোরকম সমঝোতার সম্ভাবনা নেই বলেও ভারতের পক্ষ থেকে কঠোর ভাষায় জানানো হয়েছে। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তারেক জিয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশে যে একটি পরিছন্ন রাজনীতির ধারা যদি তৈরি করতে হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে তারেক জিয়ার মতো দণ্ডিত, দুর্বৃত্তদেরকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়। আর এই বার্তাটি বিএনপির অন্তত দুইজন নেতাকে দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখন দেখার বিষয় যে, তারেক জিয়া দলের নেতৃত্বে থেকে সরিয়ে দেওয়া মার্কিন প্রস্তাব বিএনপি কিভাবে গ্রহণ করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭