মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বৈঠক হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই বৈঠকে দুই দেশের আঞ্চলিক স্বার্থ নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয় আলোচনা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকে কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো মতোই জানে যে, এই অঞ্চলে চীনের যে আধিপত্য বিস্তার হয়েছে তাতে এই মুহূর্তে ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে দুই দেশের কোন পক্ষ থেকেইহরদীপ সিং বা কানাডা নিয়ে কোন কিছু বলা হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং একটি অভিন্ন কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করার ব্যাপারে ভারত তার অবস্থান পুনর্ব্যাক্ত করেছে। এবং সেই আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থানে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ভারত মনে করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যেরকম ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাতে বাংলাদেশ যেকোনো সময় চীনের বলয়ে চলে যেতে পারে এবং এরকম পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় তাহলে এই উপমহাদেশের জন্য তা হবে প্রচন্ড ক্ষতিকর। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে সরকার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করছে (যদি এরকম চেষ্টা করে থাকে) সেটি এই অঞ্চলের জন্য হুমকি হতে পারে বলে ভারত মনে করে।
ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে বর্তমান সরকার না থাকলে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের বিস্তার ঘটবে, চীনা আধিপত্য প্রসারিত হবে এবং ভারতের অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ভারত মনে করে যে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে না। যে কারণে এই অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এই কারণে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা উপমহাদেশের রাজনীতির কৌশলগত অবস্থান বুঝিয়েছেন। উল্লেখ্য, জয়শঙ্করের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যে পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করছে সেই পদক্ষেপ গুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করা, চাপ প্রদান করা না—এরকম একটি অবস্থান গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হোক এটা ভারতও চাই। তবে সেই নির্বাচনের আগেই একটি অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের পক্ষ থেকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে যা কিছুই করা হোক না কেন সেটির ফলে যেন চীন লাভবান না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টিতে ভারতের সঙ্গে একমত বলেই একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। যদিও দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো কিছুই বলা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, জয়শঙ্কর-ব্লিঙ্কেনের এই বৈঠকের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছু কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করবে। তবে তা কতটুকু এবং কিভাবে করবে বোঝা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের ওপর।