ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়ার প্রশ্নে কেন প্রধানমন্ত্রী অনড়?


প্রকাশ: 30/09/2023


Thumbnail

বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে কি হবে না এই সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ তিনি যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৪ অক্টোবর সকালে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং তাকে এই মুহূর্তে কেন বিদেশে পাঠানো উচিত সে সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে এই বার্তাটি দেওয়া হয়েছে যে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতিশীল। তার যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে এবং এটার ফলে সরকারের ওপর দায় বর্তাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে এটিও জানানো হয়েছে যে বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে সরকারের ইমেজ বাড়তে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য পরিণতির দায় দায়িত্ব সরকার এড়াতে পারে। এসবের পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সবুজ সংকেত দেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই অনড় অবস্থানের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। যে সমস্ত কারণে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়ার অনুমতির বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করছেন না। এইসব কারণের মধ্যে রয়েছে- 

১. আইনের বাধ্যবাধকতা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন যে, আইনের যদি ব্যত্যয় ঘটানো হয় তাহলে একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি হবে। এর ফলে সরকার দুর্বল এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, আইন তার নিজের মতো করে চালাতে পারে এটি প্রমাণ করা বিরোধী পক্ষের জন্য সহজ হবে। বেগম খালেদা জিয়া আদালতে দণ্ডিত। কাজেই একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। আর এরকম ঘটনা যদি ঘটানো হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সরকার আইন নিয়ন্ত্রণ করে এমনটি প্রমাণ করা বিরোধী পক্ষের জন্য সহজ হবে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী এটি আইনের হাতে তুলে দিতে চান। নিজে নিতে চান না। আদালত যদি বেগম খালেদা জিয়াকে অনুমতি দেয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোন দায় দায়িত্ব থাকে না। প্রধানমন্ত্রী এই কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দিতেই আগ্রহী।

২. অতীত রাজনৈতিক তিক্ততা: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের একটি বড় কারণ হলো অতীত রাজনৈতিক তিক্ততা। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন। এখন তথ্য-উপাত থেকে এটি প্রমাণিত। বেগম খালেদা জিয়া এই সমস্ত খুনিদেরকে লালন করেছেন, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টের ভুয়া জন্মদিন উৎসব পালন করেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়ে রাজনীতির বিভাজন তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এই সমস্ত অতীত রাজনৈতিক তিক্ততার কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

৩. যথেষ্ট মানবতা দেখানো হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যথেষ্ট মানবতা দেখানো হয়েছে। দণ্ডিত হবার পরও তাকে বাসায় চিকিৎসা করার অনুমতি দেওয়াটা সরকারের উদারতার প্রমান। এর বেশি কিছু দেওয়া সম্ভব নয়। এরকম একটি ধারণা থেকেই প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

৪. রাজনৈতিক কৌশল: আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে বিএনপি এবং সংশ্লিষ্টরা মনে করবে সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ নানা বিষয় নিয়ে সরকারের ওপর চাপ আছে বলে বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এখন যদি বেগম জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে এটা বলা সহজ হবে যে বিদেশি চাপের কারণেই সরকার বাধ্য হয়েছে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে। এই দুর্বলতা সরকার দেখাতে চাচ্ছেন না। 

৫. বিদেশে গিয়ে অন্যরকম ঘটনা ঘটানো: তারেক জিয়াও মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়েছিল ২০০৭ সালে। তিনি আর রাজনীতি করবেন না এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিদেশে গিয়ে তিনি এখন বিএনপির নেতা হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া যতই অসুস্থ থাকুক না কেন বিদেশে গেলেই তার পক্ষে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি ইত্যাদি দেওয়া হতে পারে এবং তিনি প্রতিনিয়ত নানা রকম বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন। এরকম ধারণা থেকেই প্রধানমন্ত্রী অনড় অবস্থানে রয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭