ইনসাইড পলিটিক্স

‘নির্বাচনে যাও আমরা দেখছি’: বিভ্রান্ত বিএনপি


প্রকাশ: 30/09/2023


Thumbnail

কদিন আগেও বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের সুর পাল্টেছে। তারা বলছে, সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। নির্বাচনে আসার সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর পরামর্শের কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। বিএনপিকে পশ্চিমা দেশগুলো এখন সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, ‘নির্বাচনে যাও আমরা দেখছি।’ নির্বাচনে যদি কোনরকম কারচুপি হয় তাহলে সেই কারচুপির বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আর এ কারণেই বিএনপিকে এখন বিভ্রান্ত লাগছে। তারা তাদের আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে।

বিএনপির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা কূটনৈতিকদের দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এই সমস্ত বৈঠকে আগামী নির্বাচন, সম্ভাব্য আন্দোলন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। তবে পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিকরা তাদেরকে একাধিক কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা যে সমস্ত যুক্তিগুলো বিএনপিকে দেখাচ্ছেন তার মধ্যে রয়েছে-

১. এবার নির্বাচন আগের মতো হবে না: বিএনপিকে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, এবার বাংলাদেশে কোন অবস্থাতেই ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে না। যার ফলে এবার নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি আগ্রহ দেখাতেই পারে। কারণ এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবে, মনিটরিং করবে এবং নির্বাচনের আগে থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনের গতিবিধির দিকে নজর রাখবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো কারচুপি চেষ্টা করা হলে সাথে সাথে তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফলে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন এবার সরকারকে করতেই হবে তা যে পদ্ধতিতেই সরকার করুক না কেন। 

২. একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা: নির্বাচণে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করবে এমন বার্তাটি পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপিকে দিয়েছে। সে ধরনের নির্বাচনে যদি ভোটার উপস্থিতি বেশি হয় তাহলে সেই নির্বাচনের ব্যাপারে নেতিবাচক কোন মনোভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমবাংলা দেখাতে পারবেন না। তাছাড়া যদি বেশির ভাগ ভোটার ভোট নেয় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয় তাহলে কারোরই কিছু বলার থাকবে না। এরকম একটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। কাজেই বিএনপির উচিত নির্বাচনে যাওয়া এবং নির্বাচনের মাধ্যমে আন্দোলনকে বেগবান করা। 

৩. নির্বাচনে সকল প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা: নির্বাচনে পশ্চিমা দেশগুলো সকল পক্ষের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে বলেই জানিয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ইত্যাদি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। ভিসা নীতির ফলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ অন্যান্যরা নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকবে বলেই পশ্চিমরা বিশ্বাস করে। আর এর ব্যত্যয় হলে সেই নির্বাচনের স্বীকৃতির সংকট তৈরি হবে। ফলে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে তারা একটি নিরপেক্ষ পরিবেশেই নির্বাচন করতে পারবে।

৪. অন্যান্য সংকটগুলোর দিকেও নজর দেওয়া: যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে বিএনপির যে অন্যান্য সমস্যা গুলো রয়েছে যেমন- তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়রানি, নির্বাচনে অযোগ্যতা এই সমস্ত বিষয় গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের সাথে আলোচনা করবে এবং এর মাধ্যমে একটি সুরাহা বের হয়ে যাবে। কাজেই নির্বাচনে না গিয়ে যদি আন্দোলন করা হয় এবং সরকার যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করে তাহলে বিএনপি ঠকবে। এ কারণেই বিএনপিকে এখন বলা হচ্ছে ‘নির্বাচনে যাও আমরা দেখছি।’ এর ফলে বিএনপির মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের বিভ্রান্তি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭