প্রকাশ: 01/10/2023
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তথা নয়াচীন প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের পহেলা অক্টোবর দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে চীনে গণপ্রজাতন্ত্রী
সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি। বিগত ৭৪ বছরে একটি চরম দরিদ্র
দেশ থেকে চীন বর্তমানে পুরো বিশ্ব গ্রাস করে চলেছে। শুধু এশিয়াতেই নয়
বরং বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে চীন এখন আমেরিকার চোখে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে চলে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকা প্রায় সবই চীনের দখলে। দিনের পর দিন যুদ্ধবিহীন সুকৌশলে
একটার পর একটা রাষ্ট্র তারা তাদের পকেটে পুরে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে
টক্কর দেয়ার মতো বৈশ্বিক পরাশক্তি হয়ে উঠেছে চীন, মূলত বিশ্বকে এটিই দেখিয়ে দিতে চায়
তারা।
চীনের এই সারা বিশ্ব দখল করতে পারার করার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ঋণ কূটনীতি বা ঋণের ফাঁদ। আর এই ঋণ কূটনীতির ফাঁদে ফেলে চীন ক্রমেই পুরো বিশ্ব জয় করে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোকে ঋণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে চীন সুকৌশলে সেদেশগুলোর রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছে।
শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে গ্রাস করে নিল চীন:
চীন শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দর ১০০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে কারণ শ্রীলংকা
চীনের ঋণ সঠিক সময় প্রদান করতে পারেনি। সাথে সাথে চীন শ্রীলংকার একটি রাজনৈতিক দলকে
সমর্থন দিয়ে আরেকটি রাজনৈতিক দলকে তারা ভারতের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। শ্রীলঙ্কার
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে চীন শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের আয়ত্তে অর্থাৎ চায়নার
ব্লকে রাখার চেষ্টা করছে।
চীনের মধ্যপ্রাচ্য দখল:
সাম্প্রতিক সময়ে
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের পালাবদলে চীন যে এ অঞ্চল নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছে তা
টের পাওয়া যায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির মধ্য দিয়ে।
গত মার্চেই চীনের মধ্যস্থতায় আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন সৌদি
আরব ও ইরানের প্রতিনিধিরা। চার দিন পর রিয়াদ ও তেহরান ঘোষণা দেয়, দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুলছে দুই দেশের বন্ধ থাকা দূতাবাসও। আর এই ঐতিহাসিক চুক্তির
মধ্য দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে বৃহৎ বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ভূমিকায় পরিবর্তন আসা শুরু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চীনের নেতৃত্বদানের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সে পথ সুগম করেছে তারা এ চুক্তির
মাধ্যমেই। সৌদি আরব ও ইরানকে সমঝোতায় আনতে পারার মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরিই এগিয়ে আছে বেইজিং। এছাড়া রিয়াদ ও তেহরান উভয়েই মনে করে, আঞ্চলিক
সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চীনের মাধ্যমে এগোলে তারা লাভবান হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের
প্রভাব-প্রতিপত্তি যে দ্রুত কমছে ইরান-সৌদি মীমাংসা চুক্তিকে তার জলজ্যান্ত একটি উদাহরণ
হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এক কথায়, কোনোরকম যুদ্ধ ছাড়াই অত্যন্ত
সুকৌশলে চীন মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে ছাড়লো।
নেপাল-ভুটানে যেভাবে নব্য উপনিবেশ গড়ে তুলেছে চীন:
নেপাল এক সময় ভারতের সবচেয়ে কাছের একটি
দেশ ছিল। সীমান্ত, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক সব দিক দিয়েই। কিন্তু চীন তাদের নিজস্ব অর্থায়নে
নেপালের বিভিন্ন উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা শুরু করে। একটা পর্যায়ে নেপালে তারা
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু করে দেয় এবং এতে সেখানে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব জন্ম নিয়ে দেশটি
বর্তমানে চীনের দিকেই বেশি ঝুকে পড়েছে।
এদিকে মায়ানমার আর পাকিস্তান তো এক প্রকার
চীনের অঘোষিত অঙ্গরাজ্য হিসেবেই বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে চীনের দেওয়া নির্দেশাবলীর
ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর মাধ্যমে চীন একদিকে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোকে ঋণ ও অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে তাদেরকে
দিয়ে নব্য উপনিবেশ তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে এই সব অঞ্চলে চীন এক প্রকার সুপার পাওয়ার
এর ভূমিকা পালন করছে।
আফ্রিকায় সামরিক ঘাটি স্থাপন ও আধিপত্য বিস্তার:
আফ্রিকাতে সামরিক
ঘাঁটি স্থাপনের পাশাপাশি অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত আফ্রিকান দরিদ্র দেশগুলোকেও ঋণের
জালে আটকে ফেলছে চীন। ইতোমধ্যে ‘জিবুতি’ নামক ছোট দ্বীপ দেশটিকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে
তারা। এই জিবুতিতেই ২০১৭ সালে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে চীন। চীন পরিচালিত দোবালেহ বন্দরের
পাশেই তাদের সামরিক ঘাটিটি অবস্থিত।
বৈশ্বিক নেতৃত্বে
চীন তার অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে অত্যন্ত কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের পথচলায় আফ্রিকায়
বেশি করে সামরিক ঘাঁটি গড়ার দিকে নজর দিয়েছে চীন। গোটা আফ্রিকাজুড়ে চীনের প্রায় ১০
হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক ১৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হচ্ছে।
২০২৫ সালের মধ্যে ২৫০ বিলিয়ন আয়ের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে চীন। সামরিক ঘাঁটি
প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে শানিত করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে চীন এশিয়া
ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোকে টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছে। এসব দরিদ্র দেশের সাধারণ মানুষের
অর্থনৈতিক এবং নিজ দেশীয় সম্পদ ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করে চলেছে চীন। চীনের কৌশল হচ্ছে তারা আফ্রিকা মহাদেশে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করতে
নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে এমনটা দেখানো।
এই যে দুনিয়ার যেখানেই অর্থসঙ্কট বা বিনিয়োগসঙ্কট সেখানেই কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার নিয়ে ত্রাতার বেশে হাজির হয়ে যাচ্ছে চীন এর পেছনে দিন দিন নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তির বিস্তার ঘটানোই মূলত চীনের আসল উদ্দেশ্য। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকাসহ—প্রায় সবখানেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে একালের অর্থনৈতিক পরাশক্তি শি জিনপিংয়ের দেশ। এমনকি উত্তর আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়াকেও আর্থিক বিনিয়োগে বাঁচিয়ে রাখছে চীন।
বলা যায়, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন একরকম নিভৃতেই পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে নেবে চীন কিন্তু কেউ টের পাবে না।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭