এডিটর’স মাইন্ড

মালদ্বীপে বিপর্যয়, বাংলাদেশ নিয়ে আরও মরিয়া ভারত


প্রকাশ: 01/10/2023


Thumbnail

মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থীদের জয় হয়েছে। সেখানে ভারতের অনুগত প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। এর ফলে এই উপমহাদেশে আরও একলা হয়ে পড়লো ভারত। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা চীনের দখলে চলে গেছে। পাকিস্তান ভারতের জন্মগত শত্রু। নেপালেও এখন ভারত বিরোধীতা আগের চেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়েছে। আর সর্বশেষ মালদ্বীপও ভারতের হাত ছাড়া হয়ে গেল। এরকম অবস্থায় এই উপমহাদেশে বন্ধুহীন ভারত তার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য বাংলাদেশের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। মালদ্বীপের এই নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং বাংলাদেশে ভারত তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আরও বেশি মরিয়া হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে একটা দ্বিমত সকলেই লক্ষ্য করেছেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাচ্ছে এবং সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে সেখানে ভারত মনে করছে যে, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হলে বা বর্তমান সরকারকে দুর্বল করলে এই অঞ্চলের ক্ষতি হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যদি সরকারের ওপর বেশি ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয় তাহলে সরকার চীনের দিকে ঝুকে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছে ভারত। আর এই বিষয়টি নিয়ে ভারত একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে দর কষাকষিও চলছে। এখন যখন মালদ্বীপের নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটলো তখন ভারত নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেবে।

ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত অনেক দীর্ঘ এবং কৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ সালের আগে এই সীমান্ত দিয়েই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে আসতো এবং বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থাকতো। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর তারা ভারতে গিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্ম তৎপরতা চালাতো। বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের তৎপরতার ব্যাপারে ভারত বাংলাদেশকে অভিযোগ করলেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। এই সময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে রুট হিসাবে ব্যবহার করা হতো। আর ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্য ব্যবহার করা হবে না—এমন ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করেন। 

বর্তমান সরকারের প্রতি যে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের আস্থা তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন। ভারত মনে করে যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন জন্যই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আর এ কারণেই তারা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা চায় এবং আগামী নির্বাচনে যেন শেখ হাসিনা দুর্বল না হয় সেটি নিশ্চিত করতে চায়। আর এই রকম অবস্থানের সঙ্গে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমত না পোষণ করে সেটি নিয়ে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে। তবে এখন মালদ্বীপের নির্বাচনের ফলাফলের পর ভারত বিশ্বে এ বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেবে এবং এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭