প্রকাশ: 02/10/2023
১ অক্টোবর ২০০১।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এর আগে জুলাই মাসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় শান্তিপূর্ণ
ভাবে। কিন্তু ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ফলাফল ঘোষনার সাথে সাথে সারাদেশে
বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা তান্ডব শুরু করে, শুরু হয় সন্ত্রাস, নারকীয়তার বিভৎস
উৎসব। ঐ সময়কার ঘটনা উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সহে
না মানবতার অবমাননা’ শীর্ষক লেখায়। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আজ ২ অক্টোবর
লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হলো-
মানবাধিকার রক্ষার জন্য আমরা
কি করেছি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে?
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের
মূল ভূ-খণ্ডের এক-দশমাংশ। এ এলাকায় প্রতিদিন ভ্রাতৃঘাতী-আত্মঘাতী সংঘাত চলছিল। এলাকার
উপজাতীয় গোষ্ঠী স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত ছিল আর তাদের দাবিয়ে
রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সেনা অভিযান চালানো হতো শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে।
প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো। স্থায়ী বাসিন্দা, অস্থায়ী বাসিন্দা, উপজাতি, বাঙালি,
সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের এবং যারা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তাদের
রক্ত ঝরত। লাশ পড়ত প্রতিদিন। অনেক মায়ের কোল খালি হতো। ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ
করেছে, তিন দশক ধরে এই সংঘাত চলে। এজন্য প্রতিদিন ১ কোটি টাকা খরচ হতো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার
গঠন করার পর আমি সরকারপ্রধান হিসেবে তাদের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশ বা শক্তি ছাড়াই দ্বিপাক্ষিক
আলোচনার মাধ্যমে শান্তিচুক্তি করি। অস্ত্র সমর্পণ করাই এবং সেখানে শান্তি ফিরে আসে।
এক অসাধ্য সাধন আমরা করেছি। যেখানে প্রতিদিন রক্ত ঝরত, সেখানে এখন শাস্তির পুষ্প ফোটে।
মানুষ শান্তির জীবন ফিরে পেয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর মানবাধিকার
রক্ষা করেছি। মানবতার বিরুদ্ধে প্রতিদিনের সংঘটিত অপরাধের অবসান ঘটিয়েছি। আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।
এভাবে উপজাতীয় গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন হবার পথ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। ভারতে ৬৫
হাজার শরণার্থী ছিল তাদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। সরকারি চাকরি দেওয়া
হয়েছে। কাজের ব্যবস্থা হয়েছে, জমি দেওয়া হয়েছে চাষাবাদের জন্য। শিক্ষাগ্রহণের ছেলেমেয়েরা
স্কুলে যাচ্ছে। হাট-বাজার বসছে। আমাদের সরকার সবসময় বিশ্ব শান্তি ও সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বে
বিশ্বাসী। সংঘাত নয়, শাস্তি চাই। পশ্চাৎপদতা নয়, প্রগতির পথে অগ্রযাত্রা চাই।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গার
পানির হিস্যা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো সমস্যাই
সমাধান সম্ভব। আমরা তা প্রমাণ করেছি। এখানে তৃতীয় কোনো শক্তির সহযোগিতা ছাড়া দ্বিপাক্ষিক
আলোচনার মাধ্যমে ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আমি বিশ্বাসী।
সংঘাত ধ্বংস ডেকে আনে আর বন্ধুত্ব সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ও এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়।
পানি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে আমাদের দেশে মাটির “উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মরুময়তার
হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যা মানবতার সেবার কাজে লেগেছে।
খাদ্য ঘাটতির দেশ যেখানে চল্লিশ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা
অর্জন করি। ঘাটতি পূরণ করেও ২৫ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত উৎপাদন করে। খাদ্য নিরাপত্তা
সৃষ্টি করি যা কিনা মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম । নদীর নাব্যতা ফিরে পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল
ও সুন্দরবন রক্ষা পেয়েছে। লবণাক্ততা হ্রাস পেয়েছে। বাঘের আবাসস্থান ফিরে পেয়েছে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি
ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা একটি জাতিকে সমৃদ্ধ করে, উন্নত করে, আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে
তোলে।
(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-২।। পৃষ্টা:২৭-২৯)
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭