ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে ভারতের কেন এত প্রয়োজন?


প্রকাশ: 02/10/2023


Thumbnail

যেখানে ভারত চেয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে, সেখানে দিনকে দিন ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে রাষ্ট্রটি। এক সবেধন নীলমণি বাংলাদেশ ছাড়া আর তেমন কোনো রাষ্ট্র-ই কিন্তু আদতে ভারতের পাশে নেই বলা যায়। উপমহাদেশের কর্তৃত্ব ধরে রাখতেই তাই হয়তো এতটা বাংলাদেশ ‘প্রীতি’ ভারতের।

এক এক করে, প্রায় সব কটা পাশের রাষ্ট্রই ক্রমে ভারতের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সাথে ভারতের আজীবনের শত্রুতা। দেশভাগের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক কোনোকালেই ভালো ছিল না। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বললেই চলে। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে তাদের যে দ্বন্দ্ব, এর শেষ কোথায় এই দুই রাষ্ট্র নিজেরাও তা জানে না।

সম্প্রতি, পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ভারাক্রান্ত একটি রাষ্ট্র। কিন্তু বলে রাখা ভালো এ অবস্থার উত্তরণ হলেই তারা আবার তাদের নিয়ম মাফিক সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে ভারতের বিরুদ্ধে। আর এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

একইভাবে, শ্রীলঙ্কার সাথেও যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ভারতের তা আর নেই বললেই চলে। বিগত বছরে শ্রীলঙ্কায় যে নজিরবিহীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছিল তাতে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতের কোনো সক্রিয় ভূমিকা দেখেনি দেশটি। শ্রীলঙ্কাকে মানবিক বা অর্থনৈতিক সাহায্য করার ঘোষণা দিয়ে সামান্য সাহায্য করলেও কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা এমনকি শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের প্রতিও সমর্থন জানায়নি ভারত এবং সেটা নিজ স্বার্থের কারণেই। আর তাই বর্তমানে ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কা তেমন একটা পাত্তাই দিচ্ছে না ভারতকে।

এছাড়া দিল্লি ও কলম্বোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রশ্নেও কয়েক বছর ধরেই কিছুটা অবহেলা ছিল ভারতের। ফলে সেখানে এখন চীন প্রভাবশালী বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছে। ২০১৫ সাল থেকেই চীন ওই দেশের শীর্ষ একক ঋণদাতা এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। এমনকি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও শ্রীলংকা ভারতের চেয়ে চীন থেকে বেশি আমদানি করেছে।

এদিকে নিরাপত্তা ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দিকে দিয়ে যে প্রতিবেশী দেশটির গুরুত্ব ভারতের কাছে অনেক, সেই নেপালের সাথেও গত কয়েক বছরে সম্পর্ক ক্রমেই নষ্ট হয়েছে ভারতের। অপরদিকে, সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে ভারতের সাথে বৈরি সম্পর্ক থাকা একটি দেশের সাথে। বর্তমানে নেপালেও এখন আর তেমন প্রভাব খাটাতে পারছে না ভারত।

প্রতিবেশী দেশ নেপালে মাওবাদী সরকার ক্ষমতায় আসায় ভারত-নেপালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পড়েছে প্রভাব। কারণ অতীতে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে নয়াদিল্লিকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছেন প্রচণ্ড এবং কেপি শর্মা ওলি। “মি. অলি ২০১৫ সালে সীমান্ত অবরোধের সূত্র ধরে তখন থেকেই নেপালে ভারত বিরোধী মনোভাব উসকে দিয়ে চলেছেন।

এদিকে ভুটানের মতো দেশের উপরও বর্তমানে ভারতের চেয়ে কর্তৃত্ব বেশি চীনের। প্রভাব বিস্তারে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যে চায়না তার স্বভাব মতোই প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে দেশটিতে।

সর্বশেষ, মালদ্বীপেও সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন চীনপন্থী নেতা মুইজ্জু। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে ভারতপন্থী নেতা মোহাম্মদ সলিহকে পরাজিত করে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি মূলত চীনপন্থী নেতা হিসেবে বিবেচিত। মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। তাই দেশটিতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে ভারত ও চীন দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ভারতের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মালদ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ করে না। সলিহর আমলে ভারতের প্রভাব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। মুইজ্জুর এই জয়ে মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের দিকেও কোণঠাসা হয়ে পড়ল ভারত।

সার্বিক বিবেচনায় এই উপমহাদেশে বর্তমানে বাংলাদেশই ভারতের একমাত্র ছায়াসঙ্গী বলা চলে। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের সাথে আর কোনো দেশেরই তেমন একটা সুসম্পর্ক নেই এই দক্ষিণ এশিয়ায়। ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রটিকে বাংলাদেশের আসলে যতটা প্রয়োজন, বাংলাদেশকেও ভারতের প্রয়োজন ঠিক ততটাই, তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭