ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া কি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন?


প্রকাশ: 02/10/2023


Thumbnail

আইন মন্ত্রণালয় যখন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন, তখন ধারণা করা হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সব পথ হয়তো বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়নি। এখনও তার বিদেশে যাওয়ার একটি সহজ সুযোগ রয়েছে এবং সেই সহজ সুযোগটি হল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ ধারায় রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ অর্থাৎ, বেগম খালেদা জিয়া যে একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন সেই দন্ড মওকুফ করে দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। তবে এ ধরনের আবেদন করতে গেলে বেগম খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করতে হবে এবং তার জন্য অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। বেগম জিয়ার কুশলী এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে এটি অপমানজনক, অসম্মানজনক এবং এটি কোন অবস্থাতেই বেগম খালেদা জিয়া মেনে নেবে না। কিন্তু আইন আইনজ্ঞরা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে সহজ সমাধান। 

ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী বলেছেন যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করা হয়ে গেছে। কাজেই এটি এখন তামাদি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটির মাধ্যমে তার বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা কোনভাবেই সম্ভব না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর ৫(ক) তে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট কোনো শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা মঞ্জুর করলে উক্ত শর্ত যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, তা এই আইন অনুসারে কোনো উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা আরোপিত শর্ত বলে গণ্য হবে এবং তদানুসারে বলবৎযোগ্য হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের আইনে বলা হচ্ছে যে, সবার ওপরে সংবিধান এবং সংবিধানের সাথে যদি কোনো আইন সাংঘর্ষিক হয় সেক্ষেত্রে সংবিধানই প্রাধান্য পাবে। এরকম বাস্তবতায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বা উন্নতি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন তাহলে ৪০১ বাধাগ্রস্ত হবে না। 

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১’এর মাধ্যমে যদি তার বিদেশ যেতে হয়, তাহলে তার এখনকার যে বিশেষ বিবেচনায় জামিন প্রদান তা বাতিল করতে হবে। এই বাতিল প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র সরকারের রয়েছে। এটি বেগম খালেদা জিয়ার নেই। খালেদা জিয়া যদি এই জামিন বাতিল করার জন্য আবেদন করেন তাহলেও সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। সরকার তার জামিন বাতিলের আবেদন গ্রহণ করবেন কি করবেন না।

তারপরও কিছু ব্যাপার রয়েছে। তখন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিতে হবে। সেটি হয়তো বেগম খালেদা জিয়া ব্যবস্থা করতে পারবেন। তিনি যেখানে এখন অবস্থান করছেন সেখানেই বিশেষ কারাগার করে তাকে জামিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত কি হবে না হবে সেটি যেমন অনিশ্চিত, তেমনি এই প্রক্রিয়াগুলো অনেক দীর্ঘ। তার চেয়ে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি এখনই আবেদন করেন এবং রাষ্ট্রপতি যদি বিষয়টিকে মানবিক বিবেচনা করে তার ক্ষমা প্রার্থনা মঞ্জুর করেন, তাহলে তিনি কারাগার কারামুক্ত হবেন দন্ডমুক্ত হবে। তখন তিনি বিদেশ যেতে পারবেন। তবে এই ধরণের আবেদন করলে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দন্ডে দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনের জন্য অযোগ্য থাকবেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭