ইনসাইড বাংলাদেশ

সহে না মানবতার অবমাননা


প্রকাশ: 03/10/2023


Thumbnail

 

১ অক্টোবর ২০০১। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে জুলাই মাসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় শান্তিপূর্ণ ভাবে। কিন্তু ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ফলাফল ঘোষনার সাথে সাথে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা তান্ডব শুরু করে, শুরু হয় সন্ত্রাস, নারকীয়তার বিভৎস উৎসব। ঐ সময়কার ঘটনা উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ শীর্ষক লেখায়। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আজ ৩ অক্টোবর লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হলো-

 

পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে যখন নির্বাচনে গেলাম তখন যে বিষয়টা লক্ষণীয় তা হলো জনগণের চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার মিল হলো না। ভোট পেলাম জনগণের। ভোটের সংখ্যা বাড়ল কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারসাজিতে আসন কমে গেল। আমাদের প্রতিপক্ষ চারদলের জোট ৬২ শতাংশ ভোট কমে গিয়ে দাঁড়ালো ৪৬ শতাংশ কিন্তু আসন বেড়ে গেল। অস্বাভাবিকভাবে ৩০০-এর মধ্যে ২২০টি আসন পেল তারা। ৩৮ ভাগ ভোট পেয়ে আমাদের দল যেখানে ১৯৯৬ নির্বাচনে পেয়েছিল ১৪৬টি আসন, সেখানে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে আমরা পেলাম ৬২ আসন। এই অস্বাভাবিক বৈষম্য নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল। যদিও দেশি- বিদেশি পর্যবেক্ষকের সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হলো না।

খেসারত দিতে হলো আমার দেশের মানুষকে, ভোটারদের এবং দলের নেতাকর্মীদের। শুরু হলো মানবাধিকারের চরম অবমাননা। সংবিধান লঙ্ঘন, গুম- খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, নির্যাতন, দখল, অমানবিক নির্যাতন এখনও চলছে। একটা রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার কৌশল নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে খালেদা- নিজামী জোট সরকার, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাদের সঙ্গে রয়েছে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। ফলে মুক্ত স্বাধীনভাবে গণতন্ত্র চর্চা হয়ে উঠছে দুরূহ। শাসকগোষ্ঠীর খেয়াল খুশিমতো চলছে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র।

ছোট্ট শিশুদেরও ধর্ষণ করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে প্রতিদিন। এসিড নিক্ষেপ, হাত-পা কেটে ফেলা, চোখ উপড়ে ফেলা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা অথবা পঙ্গু করে দেওয়া প্রতিদিনের ঘটনা। মানবতার বিরুদ্ধে প্রতিদিন সংঘটিত হচ্ছে শত শত অপরাধ। নির্যাতিত হবার পর বিচার চাইতে পারে না মানুষ। ক্ষমতাসীনদের মন্ত্রী বা এমপির হুকুম ছাড়া পুলিশ মামলা গ্রহণ করে না। কোর্টের মাধ্যমে করলেও দ্রুত ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে আসামিদের খালাস করে দেওয়া হয়। ফলে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দ্বিগুণ উৎসাহে নতুন নতুন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। নির্যাতিত হয়েও ভয়ে মানুষ মুখ খোলে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলার সাহস পায় না। কারণ তাহলে আরও অত্যাচার হবে। এভাবে নির্যাতন সয়ে সয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে আমার দেশের মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এ রকম ভয়ালরূপ আগে কখনো আমরা দেখিনি, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা আমি যখন মানবাধিকারের কথা বলছি তখন বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আমার নির্যাতিত মেয়েদের ভয়ার্ত ব্যথিত চোখ। তারা যেন প্রশ্ন করছে আমাদের কি অপরাধ? ভোট দেওয়া অপরাধ, একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা অপরাধ, অনেকের তো ভোটার হবারও বয়স হয় নি, তারপরও কেন এ নির্যাতন ভোগ করা

বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা যে দেশে থাকবে সে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও থাকবে। কিন্তু স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করলে যদি এভাবে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হতে হয় তাহলে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে বিশ্বাস করি কিভাবে? ভোটের অধিকারই যদি না থাকে ভাতের অধিকার নিশ্চিত হবে কি করে? মানবাধিকার সেখানে প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত।

 

(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-২।। পৃষ্টা:২৯-৩০)

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭