ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির নেতারা হতাশ, কর্মীরা ক্ষুব্ধ


প্রকাশ: 03/10/2023


Thumbnail

সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার পর যেভাবে আন্দোলনের গতি বাড়াবে বলে অনেকে আশা করেছিল সেই গতি বাড়েনি। বিএনপির অনেকেই মনে করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করলে সরকার নতজানু হয়ে যাবে, দুর্বল হবে এবং বাধ্য ছেলের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেবে। সেটিও হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ চাওয়ার অনুমতির ব্যাপারে বিএনপির নেতারা যারপরনাই আশাবাদী ছিলেন। তারা মনে করেছিলেন যে সরকার হয়তো এরকম পরিস্থিতিতে বেগম জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু সরকার সেখানেও তার কোনো দুর্বলতা প্রকাশ করেনি। এরকম একটি পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপি এখন কি করবে?

বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, আগামী কয়েকটা দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। কিন্তু পতন ঘটা তো দূরের কথা, বিএনপি এখন আন্দোলনের সংকটেই ভুগছে। বিএনপির নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। একেক জন বিএনপির নেতার ২০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। নিয়মিত তাদেরকে কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলনে তারা কোনো ফল দেখছেন না। এখন তারা হতাশায় ভুগছেন। শেষ পর্যন্ত যদি এই ভাবেই আন্দোলন এগোতে থাকে তাহলে বিএনপি কি পারবে নির্বাচন ঠেকাতে? নির্বাচন থেকে যদি বিএনপি দূরেও থাকে তাহলে পরিস্থিতি কি হবে—এ নিয়েও মধ্যে রয়েছে নানামুখী আলাপ আলোচনা এবং হতাশা। 

অন্যদিকে বিএনপির কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গত কিছুদিন ধরেই বিএনপির কর্মীরা নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। সবকিছু উজাড় করে দিয়ে, জেল জুলুমের ভয় উপেক্ষা করে বিএনপির এই কর্মীদের কর্মসূচিতে থাকার লক্ষ্য একটাই। তারা মনে করছিল যে, যেকোনো ভাবেই হোক সরকার চাপে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হবে। কিন্তু সরকারের মধ্যে কোনো রকমের চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে কর্মীরা ক্ষুব্ধ। কর্মীরা মনে করছেন যে, নেতারা বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং তারা সরকারের সঙ্গে এক ধরনের আপোষ রফা করে ফেলেছেন। আর এই আপোষ রফার কারণেই বিএনপি বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না। বিএনপির কর্মীরা প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন, বিভিন্ন রকমের প্রত্যাশা নিয়ে তারা মনে করছেন আজকে কোনো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমগুলো প্রতিদিনই বিএনপির কঠোর কর্মসূচির কথা লিখছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কঠোর কর্মসূচি বিএনপি দিতে পারছে না। বিএনপির মধ্যেই চলছে নানারকম অবিশ্বাসের দোলাচল, কোন্দল এবং একে অপরকে অবিশ্বাস করছেন প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন দিলে তার পরিণতি কি হবে সেটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্বীকার করেছেন যে, মানুষ অপেক্ষা করছে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। বিএনপি যদি এবার সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে তাহলে সামনে তাদের কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিএনপির নেতারা যতই বলুক না কেন লন্ডন থেকে কঠোর আন্দোলনের কোনো বার্তা আসছে না। অন্যদিকে কর্মীরা বলছেন যে, গত কিছুদিন ধরে টানা কর্মসূচির কারণে একদিকে যেমন তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা এবং নানা রকম হয়রানি হচ্ছে তারা বাসায় থাকতে পারছেন না অন্যদিকে এই ধরনের অহিংস আন্দোলনের ফলে সরকারও কোনো চাপ অনুভব করছে না। এর ফলে কষ্ট পাচ্ছে কর্মীরা। আর তাই কর্মীরা নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপি সামনে কি করে—সেটি এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭