এডিটর’স মাইন্ড

সত্যি কি অবস্থান বদলেছে যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 04/10/2023


Thumbnail

গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কথার বাইরে যাবে না তার এরকম বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার এই বক্তব্য আরও পূর্ণতা পায় আজ হোয়াইট হাউসে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রথমবারের মতো স্বীকার করা হয় যে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এর সৌজন্য বৈঠক হয়েছে। হোয়াইট হাউসে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয় জন কিরবি জ্যাক সুুলিভানের সাথে বৈঠকের তথ্যটি প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন। এর ফলে রাজনীতিতে নানামুখী গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। 

যেকোনো বিচারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থ দেখভাল করেন। যেকোনো বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদটি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে? তার ইঙ্গিত কি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের অধিকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাজনিত ইস্যু। 

বাংলাদেশ এবং ভারত অভিন্ন ভাবে গত এক বছরে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ইস্যুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে বা গণতন্ত্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বার বার আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের উত্থান ইত্যাদির প্রসঙ্গত তৈরি করা হচ্ছে। ভারত সুস্পষ্টভাবে বলছে, বাংলাদেশে যদি সরকারের ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন হয় বা অন্য কোনো সরকার আসে তাহলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেওয়া হবে, পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি মদদ এবং পৃষ্ঠপোষকতা পায় সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদের নতুন করে উত্থান ঘটবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হচ্ছে যে, এই সরকার জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই যদি শেষ পর্যন্ত এই সরকারের কোনো রকম পরিবর্তন হয় তাহলে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে। বাংলাদেশ আরেকটি আফগানিস্তান হতে পারে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বার্তাটি বিভিন্ন সময় দেওয়া হচ্ছে।

আফগানিস্তান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানে তালেবানদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে মার্কিনদেরকে রীতিমতো পালাতে হয়েছে। কাজেই এই উপমহাদেশের যদি বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে এই উপমহাদেশটি আরও ভয়ঙ্কর অবস্থায় যেতে পারে এবং কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তারও হুমকিতে পড়তে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। তবে গণতন্ত্র এবং বিশ্ব নিরাপত্তা এই দুটির মধ্যে যদি সমঝোতা করতে হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিঃসন্দেহে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুটিকে প্রাধান্য দেবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিষয়ে বারবার অঙ্গীকার করা হচ্ছে যে, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জ্যাক সুলিভানকে এই বিষয়টি আশ্বস্ত করেছেন। তবে এই বৈঠকের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে সরে না এলেও যে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে একটা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করবে এটা অনেকেই মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭